অরবিট ও অরবিটাল আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “পারমাণবিক গঠ” ইউনিট ১ এর অন্তর্ভুক্ত
Table of Contents
অরবিট ও অরবিটাল
বিভিন্ন উপস্তর (Different Sub-Shells)
অরবিট : বোর পরমাণু মডেল অনুসারে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারিদিকে কতকগুলো বৃত্তাকার কক্ষপথ আছে। এসব কক্ষপথকে 1, 2, 3, 4 ইত্যাদি বা K, L, M, N দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কক্ষপথে ইলেকট্রন আবর্তনের সময় শক্তি বর্জন বা গ্রহণ করে না। এ কক্ষপথগুলোকে অরবিট (orbit) বলে। প্রতিটি অরবিটে সর্বোচ্চ 2n2 সংখ্যক ইলেকট্রন থাকতে পারে ।
অরবিটাল : বিজ্ঞানী সোমার ফিল্ডের মতে নিউক্লিয়াসের চারদিকে বৃত্তাকার কক্ষপথ বা অরবিটগুলো প্রকৃত অর্থে বৃত্তাকার না হয়ে উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে । এ উপবৃত্তাকার কক্ষপথগুলো আবার দুই বা ততোধিক ভাগে বিভক্ত। এদেরকে উপকক্ষপথ (Sub-orbit) বলে। উপকক্ষপথগুলোকে সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা / দ্বারা সূচিত করা হয়। I = 0 হলে ‘s’ অরবিটাল; 1 = 1 হলে ‘p’ অরবিটাল; / = 2 হলে ‘d’ অরবিটাল; 1 = 3 হলে “f” অরবিটাল বোঝায় । উপকক্ষপথ বা সাব-অরবিটকে প্রকৃতপক্ষে অরবিটাল বলে। অরবিটাল হলো নিউক্লিয়াসের চারদিকে ইলেকট্রন আবর্তনের সম্ভাব্য অঞ্চল অর্থাৎ যেখানে ইলেকট্রন প্রাপ্তির সম্ভাবনা 90-95% । কোনো নির্দিষ্ট শক্তিস্তরের যে স্থানে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি তা তরঙ্গ ফাংশন এর সাথে আনুপাতিক।
s উপস্তর বা অরবিটাল :
নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে কোনো নির্দিষ্ট দূরত্বের সর্বদিকেই যেকোনো প্রধান স্তরের, s অরবিটালে ইলেকট্রন থাকার সম্ভাবনা সর্বাধিক। এ কারণে s অরবিটালের আকৃতি গোলকের ন্যায়। ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব গোলকের পৃষ্ঠভাগে সর্বাধিক। আবার s অরবিটালের ক্ষেত্রে সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা 1 = 0, চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা m = 0, তাই প্রতিটি s অরবিটাল একই আকৃতির হয়। বিভিন্ন কক্ষে s অরবিটালের আকৃতি সুষম গোলাকার হলেও কিছু কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে বৈষম্য দেখা যায়—
(i) s অরবিটালের আকার ও আয়তন প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n এর উপর নির্ভর করে। n এর মান যত বৃদ্ধি পায় S অরবিটালের আকার ও আয়তন তত বৃদ্ধি পায় ।
(ii) প্রতিটি s অরবিটালে ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব, গোলকের মধ্যে নিউক্লিয়াসের নিকটে একইভাবে বিস্তৃত নয়। নিউক্লিয়াসের সবচেয়ে কাছের Is অরবিটালে ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব সর্বাধিক। নিউক্লিয়াস থেকে দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে এ সম্ভাবনা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে । 2s অরবিটালের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াস থেকে কিছুটা দূরে ইলেকট্রন ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, পুনরায় যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পায় এবং পুনরায় গোলকের পৃষ্ঠভাগে বৃদ্ধি পায়। যে মধ্যবর্তী স্থানে ইলেকট্রন ঘনত্ব সর্বাধিক হ্রাস পায় তাকে নোড (NODE) বলে। তাহলে Is অরবিটালে কোনো নোড না থাকলেও 2s অরবিটালে একটি নোড বর্তমান। একইভাবে 3s অরবিটাল দুটি নোড বর্তমান । সাধারণত ns অরবিটালে ( n − 1 ) সংখ্যক নোড বর্তমান ।
p উপস্তর :
দ্বিতীয় শক্তিস্তরে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n = 2, সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা 1 = 0, 1. যখন / = 0, তখন 2s উপস্তর এবং যখন / = 1 তখন 2p উপস্তর । p উপস্তর তিনটি p অরবিটাল নিয়ে গঠিত। p অরবিটাল সমশক্তি সম্পন্ন ডাম্বেল আকারের হয়। ডাম্বেলের দুই প্রান্তে পৃষ্ঠভাগেই ইলেকট্রনের ঘনত্ব সর্বাধিক। ডাম্বেলের দুটি অংশ যে বিন্দুতে এসে মিশেছে প্রকৃতপক্ষে সেখানেই নিউক্লিয়াসের অবস্থান। নিউক্লিয়াসের ভিতর দিয়ে একটি কল্পিত তল থাকে যেখানে p অরবিটালের ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব শূন্য। তাই এ অবস্থানে ইলেকট্রন থাকার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। এ তলকে নোডাল তল (Nodal Plane) বলে। প্রকৃত অর্থে প্রতিটি p অরবিটালেই একটি করে নোডাল তল থাকে ।
p অরবিটালের ক্ষেত্রে সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা / = 1, চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা m = −1, 0, +1. এ মান থেকে দেখা যায় p অরবিটাল তিন প্রকার যা সমশক্তিসম্পন্ন তিনটি উপস্তরে বিভক্ত। একে px, Py ও P2 অরবিটাল বলে। এ px, Py ও P2 অরবিটালগুলো ডাম্বেল আকারে পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে x, y, z অক্ষ বরাবর নিউক্লিয়াসের উভয় পার্শ্বে প্রতিসমভাবে (Symmetrically) অবস্থান করে। px, Py ও P2 অরবিটালের প্রত্যেকটি অন্য দুটির উপর লম্বভাবে অবস্থান করে। এ কারণে যেকোনো দুটি p অরবিটালের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব 90°.
d উপস্তর :
যখন প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা n = 3, সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা / = 0, 1, 2 তখন শুধু / = 2 এ মানের জন্য m=- -2, -1, 0, + 1, + 2 মান নির্দেশ করে যা d উপস্তর। প্রকৃত অর্থে M স্তর থেকেই সর্বপ্রথম d উপস্তর শুরু হয়। m এর মান থেকে দেখা যায় d উপস্তর পাঁচ প্রকার যা সমশক্তিসম্পন্ন পাঁচটি অরবিটালে বিভক্ত। এগুলো হলো day, dyz, dex, d2 ও dzy2। নিচে চিত্রের মাধ্যমে d উপস্তরগুলো দেখানো হলো। d অরবিটালের আকৃতি চারটি লোব বিশিষ্ট ডাবল ডাম্বেলের মতো।
১। অরবিট ও অরবিটালের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য—
সাদৃশ্য :
(১) নিউক্লিয়াসের চারদিকে আবর্তনশীল ইলেকট্রনের অবস্থানের সম্ভাবনাময় স্থান ।
(২) উভয়ের মধ্যেই শক্তির ভিন্নতা থাকে ।
(৩) উভয়েই নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ইলেকট্রনের ঘূর্ণনরত অবস্থা, অবস্থান, শক্তি ও গতি প্রকাশ করে ।
(৪) উভয় ক্ষেত্রেই গতিশীল ইলেকট্রনের পথের সুনির্দিষ্ট আকার বর্তমান ।
বৈসাদৃশ্য :
অরবিট ও অরবিটাল নিয়ে বিস্তারিত ঃ
অরবিট ও অরবিটালের মধ্যে পার্থক্য ঃ
আরও পড়ুন…