পর্যায়বৃত্ত ধর্ম: আয়নিকরণ শক্তি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “পর্যায় সারণি ও মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত
পর্যায়বৃত্ত ধর্ম: আয়নিকরণ শক্তি
আয়নিকরণ বিভব (Ionisation Potential) :
আয়নিকরণ শক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম অর্থাৎ মৌলের আয়নিকরণ শক্তির মান নির্দিষ্ট পর্যায়ে এবং শ্রেণিতে পারমাণবিক সংখ্যার পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয়। গ্যাসীয় আয়নের এক মোল চার্জ নিরপেক্ষ পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণের মাধ্যমে একক ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট আয়ন সৃষ্টি করতে যে শক্তির প্রয়োজন সেই শক্তিই হলো মৌলের প্রথম আয়নিকরণ শক্তি। যেমন-
সংজ্ঞা : গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণু থেকে একটি করে ইলেকট্রন সরিয়ে এক মোল একক ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে সেই মৌলের আয়নিকরণ বিভব বা আয়নিকরণ -শক্তি বলে ।
কোন একটি নির্দিষ্ট গ্রুপে উপর থেকে নিচে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস হতে সর্বশেষ শক্তিস্তরের দূরত্ব ক্রমশ দূরে সরে যায় এবং যোজ্যতা স্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষন হ্রাস পায়। তাই পরমাণুর আয়নিকরণ -শক্তির মান শ্রেণিতে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধিতে হ্রাস পায়। 1 শ্রেণির মৌলসমূহের প্রথম আয়নিকরণ -শক্তির মান নিম্নরূপ :
আবার পর্যায় সারণির নির্দিষ্ট পর্যায়ে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলের আয়নিকরণ বিভব বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ এক্ষেত্রে মৌলের পরমাণুতে নতুন কোন শক্তিস্তর যোগ হয় না বরং একই শক্তিস্তরে ক্রমান্বয়ে পরমাণুতে একটি করে ইলেকট্রন যোজনী স্তরে যুক্ত হয় এবং একটি করে প্রোটন নিউক্লিয়াসে যুক্ত হয়। এর ফলে যোজনী স্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তাই আয়নিকরণ পটেনশিয়ালের মানও বৃদ্ধি পায়। প্রথম ১০টি মৌলের আয়নিকরণ শক্তির মান নিম্নে দেওয়া হলো :
সারণি-৭.১ : বিভিন্ন পর্যায়ের মৌলের আয়নিকরণ শক্তির মান
আয়নিকরণ শক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব
Effect of different factors on Ip
আয়নিকরণ শক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের যেমন— পরমাণুর আকার, উপশক্তিস্তর, ইলেকট্রন বিন্যাস ইত্যাদির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। নিম্নে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো :
(১) পরমাণুর আকার (Size of Atom) : পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে প্রয়োজনীয় শক্তিই হলো আয়নিকরণ শক্তি। পরমাণুর যোজনী ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে ধরে রাখে ইলেকট্রনের বিপরীত চার্জযুক্ত প্রোটন, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত। তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াস হতে যোজনী ইলেকট্রনের দূরত্ব যত কম হবে ঐ ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ তত বেশি হবে ফলে উহার যোজনী ইলেকট্রন অপসারণে বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে অর্থাৎ, আয়নিকরণ শক্তির মান বেশি হবে।
সুতরাং পরমাণুর আকার যত বেশি হবে আয়নিকরণ -শক্তির মান ততই কম হবে। পর্যায় সারণির 1 শ্রেণিতে উপর থেকে যতই নিচে যাওয়া যায় ততই পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলসমূহের আয়নিকরণ -শক্তির মান হ্রাস ঘটে।
(২) শক্তিস্তর (Energy Level) : নিউক্লিয়াস হতে কত দূরত্বে ইলেকট্রন অবস্থান করছে তা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান থেকে জানা য়ায়। অধিকন্তু ইলেকট্রনের অরবিটাল থেকেও জানা যায় যে, ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের সাথে শক্তিশালী না দুর্বল আকর্ষণ দ্বারা যুক্ত। যদি n-এর মান বড় হয় তবে নিউক্লিয়াস থেকে ইলেকট্রন অনেক দূরে অবস্থান করে ফলে ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং ইলেকট্রন সহজেই অপসারিত হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে আয়নিকরণ শক্তির মান কম হয় ।
সুতরাং, পর্যায় সারণির নির্দিষ্ট গ্রুপে উপর হতে নিচের দিকে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যোজনী ইলেকট্রনের শক্তিস্তর বৃদ্ধি পায় ফলে আয়নিকরণ শক্তির মানও হ্রাস পায়। নিম্নের উদাহরণ থেকে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
(ক) লিথিয়ামের ১ম এবং ২য় আয়নিকরণ পটেনশিয়াল যথাক্রমে 5.4 eV এবং 75-6 eV। 5.4 eV শক্তি প্রয়োজন হয় 2s’ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনটি অপসারণের জন্য এবং 75-6 eV শক্তি প্রয়োজন হয়। 2s2 শক্তিস্তর হতে একটি ইলেকট্রন অপসারণের জন্য ( Li( 3 ) 1s2 2s’)। 2s শক্তিস্তরের ক্ষেত্রে n = 2 এবং 1s এর ক্ষেত্রে n = 1 । দ্বিতীয় শক্তিস্তর প্রথম শক্তিস্তর অপেক্ষা অনেক বড়। অর্থাৎ, শক্তিস্তর যত বড় হয়, ইলেকট্রন অপসারণ তত সহজ হয়। সুতরাং, লিথিয়ামের ১ম আয়নিকরণ -শক্তির মান দ্বিতীয় আয়নিকরণ শক্তি অপেক্ষা কম।
(খ) Ne(10) এবং Ar(18) মৌলের প্রথম আয়নিকরণ -শক্তি যথাক্রমে 21.6 eV এবং 15-8 eV। এদের ইলেকট্রন বিন্যাস নিম্নরূপ:
Ne- এর ক্ষেত্রে 2p অরবিটাল হতে এবং Ar-এর ক্ষেত্রে 3p অরবিটাল হতে একটি করে ইলেকট্রন অপসারণে প্রয়োজনীয় শক্তি যথাক্রমে 21.6 eV এবং 15-8 eV। এখানে স্পষ্টত যে, Ne-এর ক্ষেত্রে n = 2 এবং Ar এর ক্ষেত্রে n = 3। অর্থাৎ আর্গনের = যোজনী নিয়নের যোজনী স্তর অপেক্ষা বড় হওয়ায় আর্গনের আয়নিকরণ -শক্তির মান নিয়নের আয়নিকরণ -শক্তি অপেক্ষা কম । উপস্তরসমূহের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন প্রবেশ করার হার স্তরসমূহের নিম্নের ক্রমানুসারে হ্রাস পায় ।
s>p>d>f
সাধারণভাবে, ‘s’ অরবিটাল নিউক্লিয়াসের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে বলে s-ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের সন্নিকটে আবর্তন করে। এরপর p-ইলেকট্রন d-ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি নিবিড়ভাবে নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি আবর্তন করে এবং d-ইলেকট্রন f-ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি নিউক্লিয়াসের কাছে থাকে । ফলে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ অরবিটাল ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে নিরে ক্রমানুসারে বৃদ্ধি ঘটে।
s>p>d>f
সুতরাং s অরবিটাল হতে ইলেকট্রন অপসারণ p-অরবিটাল অপেক্ষা কঠিন হবে এবং একইভাবে p-অরবিটাল হতে d-অরবিটাল অপেক্ষা ইলেকট্রন অপসারণ কঠিন হবে। s, p, d এবং f-অরবিটাল হতে ইলেকট্রন অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির মান অর্থাৎ আয়নিকরণ বিভব নিম্নে ক্রমানুসারে বৃদ্ধি পায় ।
s>p>d>f
আরও পড়ুন…