Site icon Chemistry Gurukul [ রসায়ন গুরুকুল ] GOLN

ইলেকট্রনের ডিলোকালাইজেশন

ইলেকট্রনের ডিলোকালাইজেশন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “রাসায়নিক বন্ধন” ইউনিট ৩ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

ইলেকট্রনের ডিলোকালাইজেশন

সমযোজী বন্ধন গঠনের সময় বন্ধনে অংশগ্রহণকারী ইলেকট্রনগুলো দুটি পরমাণুর উভয় নিউক্লিয়াসের চারপার্শ্বে পরিভ্রমণ করে থাকে। নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারদিকে পরিভ্রমণরত থাকে। এ ইলেকট্রনগুলো খুবই ক্ষুদ্র স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে। বিপরীতভাবে কিছু কিছু ইলেকট্রন একটি বা দুটি পরমাণুতে আবদ্ধ না থেকে দুয়ের অধিক পরমাণুর মধ্যে বিস্তৃত স্থাপনজুড়ে পরিভ্রমণরত থাকে।

এ জাতীয় ইলেকট্রনকে সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন বা ডিলোকালাইজড ইলেকট্রন বলা হয়। বেনজিন অণুতে এ জাতীয় সঞ্চারণশীল ইলেকট্রন পরিলক্ষিত হয়। অধাতব মৌল কার্বনের রূপভেদ গ্রাফাইটের মধ্যে এবং ধাতুর কেলাসের মধ্যেও এ ধরনের সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন বর্তমান থাকে। পক্ষান্তরে ইথিন (CH2 = CH2) ইথাইন (CH=CH) অণুতে লোকালাইজড ইলেকট্রনের উপস্থিতি দেখা যায়। লোকালাইজড অরবিটালের ক্ষেত্রে বন্ধন সৃষ্টিকারী ইলেকট্রন মেঘ দুটি পরমাণুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ।

কার্বন পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা ৬ এবং ইলেকট্রন বিন্যাস–

2pz’ অরবিটালে অসংকরিত অবস্থায় থেকে যায়। sp2 দুটি কার্বন পরমাণুর দুটি sp সংকর অরবিটালের মুখোমুখি অধিক্রমণের ফলে কার্বন-কার্বন একক বন্ধন বা সিগমা (C) বন্ধনের সৃষ্টি হয়। কার্বনের অপর দুটি sp সংকরিত অরবিটালের সাথে হাইড্রোজেন পরমাণুর 1s’ অরবিটালের অধিক্রমণ ঘটে আরো দুটি কার্বন-হাইড্রোজেন (C – H) সিগমা (G) বন্ধনের সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় বন্ধনে অংশগ্রহণকারী কার্বন পরমাণু দুটির অসংকরিত 2p,’ অরবিটাল পরস্পরের পাশাপাশি (Sidewise) অধিক্রমণের ফলে একটি পাই ( ) বন্ধনের সৃষ্টি করে। এ বন্ধন অরবিটাল লোকালাইজড অরবিটাল।

একইভাবে ইথাইন (CH=CH) অণুর গঠন কাঠামো থেকে দেখা যায় এ অণুতেও লোকালাইজড অরবিটাল বর্তমান। কিন্তু অণুতে এমনও দেখা যায় যে বন্ধন অরবিটালকে কোন নির্দিষ্ট দুটি পরমাণুর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বন্ধন ইলেকট্রনগুলো সমগ্ৰ অণুতে বিচরণশীল। এর বাস্তব উদাহরণ দেখা যায় বেনজিন অণুতে।

অরবিটাল সংকরায়ণ মতবাদ অনুযায়ী বেনজিন চক্রের প্রতিটি কার্বন পরমাণুতে sp সংকরায়ন ঘটে। প্রতিটি কার্বনে সৃষ্ট তিনটি সংকর অরবিটালের মধ্যে দুটি সংকর অরবিটাল পাশাপাশি দুটি কার্বন পরমাণুর সাথে অধিক্রমণ করে দুটি CC সিগমা বন্ধন এবং অপর সংকর অরবিটালটি হাইড্রোজেনের Is’ অরবিটালের সাথে অধিক্রমণের ফলে একটি C – H সিগমা বন্ধন সৃষ্টি করে। এভাবে ছয়টি কার্বন-কার্বন সিগমা বন্ধন এবং ছয়টি কার্বন-হাইড্রোজেন সিগমা বন্ধন দ্বারা বেনজিন চক্রের মূল ষড়ভূজীয় গঠন কাঠামো সৃষ্টি হয়।

এ অবস্থায় প্রতিটি কার্বন পরমাণুতে অসংকরিত একটি করে 2pz’ অরবিটাল থেকে যায়। এ ছয়টি ইলেকট্রন পাশাপাশি দুটি কার্বন 1 পরমাণুর মধ্যে অধিক্রমণ দ্বারা কার্বন-কার্বন তিনটি পাই (7) বন্ধন সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে এ ছয়টি 2p2 অরবিটালের ছয়টি ইলেকট্রন নির্দিষ্ট তিনজোড়া কার্বন পরমাণুর মধ্যে তিনটি পাই (7) বন্ধন রূপে স্থির অবস্থায় না থেকে বেনজিন অণুর ছয় কার্বনের মূল কাঠামোতে পাশাপাশি অধিক্রমণ দ্বারা চক্রাকারে সঞ্চরণশীল থাকে। এজন্য বেনজিন অণুর গঠনকে নিম্নলিখিতভাবে দেখানো হয় ।

চিত্র ৪.৩ : (ক) বেনজিন অণুতে দ্বিবন্ধনের অবস্থান পরিবর্তন। (খ) কাঠামোটি ক এর ১ ও ২ কে সমন্বিত করে অংকিত। এটাই প্রচলিত কাঠামো।

গ্রাফাইটের গঠন :

গ্রাফাইটের গঠনে প্রতিটি কার্বন পরমাণুতে sp2 সংকরণ ঘটে এবং তিনটি sp2 সংকর অরবিটাল ও একটি অসংকরিত অরবিটাল থাকে। গ্রাফাইটে এ তিনটি সংকর অরবিটাল দ্বারা প্রতিটি কার্বন পরমাণু অপর তিনটি কার্বন পরমাণুর সাথে সিগমা বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়। ফলে গ্রাফাইটে অসংখ্য কার্বন পরমাণু সহকারে ষড়ভুজী জালের সমতলীয় স্তর সৃষ্টি করে থাকে। প্রতিটি স্তরে এরূপ ষড়ভুজ জালের সৃষ্টি হয়। এ সব C–C বন্ধন সৃষ্টির পরেও প্রতিটি কার্বন পরমাণুতে একটি করে ইলেকট্রন যুক্ত অসংকরিত 2p2′ অরবিটাল অব্যবহৃত থেকে যায়। এ অরবিটালসমূহ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে তাদের r-ইলেকট্রনগুলো একই স্তরের সমগ্র জালিতে সঞ্চরণ করতে পারে। এ সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনের কারণেই গ্রাফাইট বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়।

মজার বিষয় হলো এভাবে অসংখ্যা গ্রাফাইট স্তর পরস্পরের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থিত। এ স্তরসমূহের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বড় ফাঁক থাকে এবং কোন রাসায়নিক বন্ধন নেই, তাদের মধ্যে দুর্বল ভ্যানডার ওয়ালস্ আকর্ষণ বল বিদ্যমান। তাই স্তরগুলো একে অন্যের উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। এ কারণে গ্রাফাইট নরম ও পিচ্ছিল। স্তরসমূহের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বড় ফাঁক থাকায় গ্রাফাইটের আপেক্ষিক গুরুত্ব (2.25) হীরক (আপেক্ষিক গুরুত্ব 3.5) অপেক্ষা কম ।

 

 

 

আরও পড়ুন…

Exit mobile version