Site icon Chemistry Gurukul [ রসায়ন গুরুকুল ] GOLN

পর্যায়বৃত্ত ধর্ম: ইলেকট্রন আসক্তি

পর্যায়বৃত্ত ধর্ম: ইলেকট্রন আসক্তি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “পর্যায় সারণি ও মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত

 

পর্যায়বৃত্ত ধর্ম: ইলেকট্রন আসক্তি

 

ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity) :

কোনো মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রনকে নিজের সর্বশেষ শক্তিস্তরে যুক্ত করার প্রবণতাকে ইলেকট্রন আসক্তি বলে। যে মৌল যত দ্রুত ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে তার ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি তত বেশি। সাধারণত ধাতব মৌলসমূহের ইলেকট্রন -আসক্তি কম এবং অধাতব মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বেশি।

সংজ্ঞা : গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণুর প্রত্যেকে অসীম দূরত্ব হতে একটি করে ইলেকট্রনের সাথে যুক্ত হয়ে এক মোল একক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন সৃষ্টি করতে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তাকে সেই মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে ।

ইলেকট্রন -আসক্তি হলো আয়নিকরণ শক্তির বিপরীত। এটি মূলত এক মোল পরমাণুকে এক মোল একক ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে নির্গত শক্তির পরিমাণকে বোঝায়। যেমন-

অর্থাৎ ক্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন -আসক্তির মান হলো 348 kJ/mol । প্রধানত নিউক্লিয়াসের চার্জ এবং পরমাণুর ব্যাসার্ধের উপর – ইলেকট্রন আসক্তির মান নির্ভর করে। ইলেকট্রন আসক্তি একটি পর্যায়বৃত্ত ধর্ম। পর্যায় সারণির একই গ্রুপে যতই উপর থেকে নিচের দিকে যাওয়া যায়, পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি হ্রাস পায়।

একই গ্রুপে মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রত্যেকটি মৌলের একটি করে নতুন শক্তিস্তর যুক্ত হওয়ায় ক্রমান্বয়ে নিউক্লিয়াস হতে যোজনী স্তরের দূরত্ব বাড়তে থাকে ফলে আগমনকারী ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে তাই ইলেকট্রন -আসক্তির মানও হ্রাস পায়। অবশ্য এ সাধারণ নিয়মের কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে গ্রুপ-17 হ্যালোজেন মৌলসমূহের ক্ষেত্রে। এ নিয়মে ফ্লোরিনের ইলেকট্রন -আসক্তি ক্লোরিন অপেক্ষা বেশি হওয়ার কথা কিন্তু ক্লোরিনের ইলেকট্রন আসক্তি (− 348 kJ/mol) ফ্লোরিন ( 333 kJ/mol) অপেক্ষা বেশি।

ফ্লোরিন পরমাণুর আকার ক্ষুদ্র। ২য় শক্তিস্তরে ৭ টি ইলেকট্রন অবস্থান করায় স্বাভাবিকভাবেই ইলেকট্রনের ঘনত্ব খুব বেশি হয়। এতে ইলেকট্রন-ইলেকট্রন বিকর্ষণ বল প্রবল হয় তাই আগমনকারী ইলেকট্রন সহজে এতে প্রবেশ করতে পারে না। অথচ ক্লোরিনের শেষ শক্তিস্তর হলো ৩য় শক্তিস্তর যার আকার ২য় শক্তিস্তর অপেক্ষা অনেক বড়। এক্ষেত্রে ৩য় শক্তিস্তরে ৭ টি ইলেকট্রন থাকায় তুলনামূলকভাবে ইলেকট্রন ঘনত্ব কম হয় এবং ইলেকট্রন-ইলেকট্রন বিকর্ষণ বলও ফ্লোরিনের ইলেকট্রন-ইলেকট্রন বিকর্ষন বল অপেক্ষা কম হয় । তাই এতে ফ্লোরিন অপেক্ষা সহজেই ইলেকট্রন প্রবেশ করতে পারে। তাই ফ্লোরিন অপেক্ষা ক্লোরিনের ইলেকট্রন -আসক্তির মান বেশি।

একটি পর্যায়ের যতই বাম হতে ডানদিকে যাওয়া যায় ততই ইলেকট্রন -আসক্তির মান বাড়তে থাকে। বাম থেকে ডানে পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি মৌলের নিউক্লিয়াসে একটি করে প্রোটন এবং প্রত্যেকটি মৌলের একই শক্তিস্তরে একটি করে ইলেকট্রন প্রবেশ করে। পর্যায়ে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধি অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের চার্জ বৃদ্ধির ফলে যোজ্যতা স্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে তাই পরমাণুর আকারও ক্রমান্বয়ে পর্যায়ের বাম থেকে ডানে হ্রাস পেতে থাকে। তাই একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধিতে মৌলের ইলেকট্রন আসক্তির মান বৃদ্ধি পায় ।

 

ইলেকট্রন আসক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব

Effect of different factors on EA

ইলেকট্রন -আসক্তির উপর যেসব নিয়ামক প্রভাব বিস্তার করে যেগুলো হলো

(i) পরমাণুর আকার

(ii) নিউক্লিয়ার চার্জ

(iii) অন্তঃ ইলেকট্রন বিন্যাস।

নিম্নে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো :

১) পরমাণুর আকার ( Size of Atom) : ইলেকট্রনকে কোনো পরমাণুর নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাকে তার ইলেকট্রন আসক্তি বলে। সাধারণভাবে, পরমাণুর আকার বৃদ্ধিতে ইলেকট্রন আসক্তির মান হ্রাস পায়। পরমাণুর আকার যতই বৃদ্ধি পায় ততই নিউক্লিয়াস হতে পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তর দূরে সরে যায় এবং আগমনকারী ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হ্রাস পায় ফলে ইলেকট্রন -আসক্তির মান কম হয়। যেমন- পর্যায় সারণির গ্রুপ-17 শ্রেণির মৌলসমূহের F(9) এর ইলেকট্রন -আসক্তির মান 3-6 ev অথচ I এর ইলেকট্রন -আসক্তির মান 3.2 eV। (53)

ফ্লোরিন পরমাণুর আকারের চেয়ে আয়োডিন পরমাণুর আকার অনেক বড় বলে F এর তুলনায় I এর ইলেকট্রন -আসক্তির মান কম।

চিন্তা করুন : ক্লোরিন পরমাণুর আকার ফ্লোরিন পরমাণু অপেক্ষা বড় হলেও ফ্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন -আসক্তির মান ক্লোরিনের ইলেকট্রন আসক্তির মান অপেক্ষা কম কেন?

(২) পরমাণুর উপস্তর (Subshell of Atom) : উপরের আলোচনা হতে এটি পরিষ্কার যে, মৌলসমূহের ইলেকট্রন -আসক্তি পরমাণুর আকারের উপর নির্ভরশীল। পরমাণুর আকারের পাশাপাশি আরও একটি নিয়ামক হলো ইলেকট্রনের উপশক্তি স্তর। ইলেকট্রনের এসব উপস্তর হলো s, p, d এবং f-অরবিটাল। s অরবিটালের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি এরপর পর্যায়ক্রমে P, d এবং f-অরবিটালে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে। তাই s-অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন -আসক্তির মান সবচেয়ে বেশি হবে এবং এরপর p, d এবং f-অরবিটালে তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাবে.

অর্ধপূর্ণ এবং পূর্ণ অরবিটালের স্থিতিশীলতা অপূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ অরবিটাল অপেক্ষা অনেক বেশি। যেসব মৌলের যোজনী স্তর অর্ধপূর্ণ বা পূর্ণ থাকে যেসব মৌলের ইলেকট্রন আসক্তির মান যোজনী স্তর ইলেকট্রন কর্তৃক আংশিক পূর্ণ থাকলে সেসব মৌলের ইলেকট্রন -আসক্তির মান অপেক্ষা কম।

Be(4) এবং Mg(12) মৌলের ইলেকট্রন -আসক্তির মান প্রায় শূন্য। Be(4) এবং Mg(12)এর ইলেকট্রন বিন্যাস নিম্নরূপ :

Be(4)এবং Mg(12) এর ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায় যে, এদের শেষ শক্তিস্তর (s) ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ রয়েছে। পরবর্তীতে আগমনকারী ইলেকট্রন Be এর 2p এবং Mg এর 3p অরবিটালে প্রবেশ করতে পারে না কারণ এ অরবিটাল দুটি তুলনামূলক উচ্চ শক্তি সম্পন্ন তাই, Be এবং Mg এর ইলেকট্রন -আসক্তি প্রায় শূন্য। একই কারণে নিষ্ক্রিয় গ্যাসসমূহের ইলেকট্রন আসক্তি শূন্য।

 

 

 

আরও পড়ুন…

Exit mobile version