কয়েকটি গ্লাস সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্র, বিধি ও ব্যবহারের কৌশল আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “ল্যাবরেটরির নিরাপদ ব্যবহার” ইউনিট ৮ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
কয়েকটি গ্লাস সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্র, বিধি ও ব্যবহারের কৌশল
মেজারিং সিলিন্ডার (Measuring Cylinder)
এটি একটি গোলাকৃতি লম্বা ফাঁপা কাচের তৈরি নল যার গায়ে 0-0 হতে 20, 25, 50, 100 ইত্যাদি মি.লি. পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে এবং নিচের দিক বন্ধ। সূক্ষ্ম মাপের প্রয়োজন না হলে এই সিলিন্ডার দিয়ে রাসায়নিক দ্রব্য বা তরল পদার্থ মেপে নেওয়া যায়। তবে আয়তন যত বেশি হয় সিলিন্ডারের আকার তত বড় হয় এবং পরিমাপের সূক্ষ্মতা তত কমে যায়। আয়তন পরিমাপের প্রয়োজন অনুযায়ী মেজারিং সিলিন্ডার নির্বাচন করা হয়। এরপর পরিষ্কার ও শুষ্ক মেজারিং সিলিন্ডারে ফানেলের সাহায্যে ধীরে ধীরে তরল পদার্থকে নির্দিষ্ট দাগ পর্যন্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তরলে অবতলের নিম্নতল ভাগ যেন সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট দাগকে স্পর্শ করে। পরে ফানেলের সাহায্যে তরল পদার্থকে পরীক্ষা সম্পাদনের পাত্রে ঢেলে নেওয়া হয়।
আয়তনমিতিক ফ্লাস্ক (Volumetric Flask)
লম্বা গলাবিশিষ্ট এবং চ্যাপ্টা তলবিশিষ্ট কাচের ফ্লাস্ককে আয়তনমিতিক ফ্লাস্ক বলে। আয়তনমাত্রিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এ ফ্লাস্কটি ব্যবহৃত হয় তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে আয়তনমিতিক ফ্লাস্ক। 100mL, 250mL, 500mL এবং 1000mL ধারণ ক্ষমতাবিশিষ্ট এ ফ্লাস্কটি হয়ে থাকে। লম্বা নলের মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে একটি দাগ থাকে যা এ ফ্লাস্কের আয়তনের সীমারেখা নির্দেশ করে। ফ্লাস্কটির গায়ে এর ধারণ ক্ষমতা লিপিবদ্ধ করা থাকে । এর মুখটি কাচ নির্মিত একটি স্টপার দ্বারা বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকে। নির্দিষ্ট আয়তনের প্রমাণ দ্রবণ প্রস্তুত করতে এ ফ্লাস্কটি ব্যবহৃত হয়।
ব্যুরেট ও ব্যুরেটের ব্যবহার কৌশল (Burette and Technique of Using Burette)
আয়তনমিতিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত নির্দেশকের উপস্থিতিতে কোনো প্রমাণ দ্রবণের সাহায্যে অপর কোনো অজানা ঘনমাত্রার দ্রবণের ঘনমাত্রা বা পরিমাণ নির্ণয়ের পদ্ধতিকে অনুমাপন ( Titration) বলে। এসিড-ক্ষার টাইট্রেশন প্রক্রিয়ার যে বিন্দুতে এসিড ক্ষার দ্বারা প্রশমিত হয় তাকে প্রশমন বিন্দু বা তুল্য বিন্দু বলে । তুল্য বিন্দুতে নির্দেশক তার বর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে বিক্রিয়ার সমাপ্তি নির্দেশ করে । টাইট্রেশন প্রক্রিয়ায় ব্যুরেট, পিপেট, কনিক্যাল ফ্লাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
ব্যুরেট হচ্ছে একটি দীর্ঘ কাচনল যার নিম্নপ্রান্তে একটি ট্যাপ বা স্টপকর্ক সংযুক্ত থাকে। ট্যাপের নিচের অংশের কাচনল অপেক্ষাকৃত সরু হয়। সাধারণত এসিড- ক্ষার টাইট্রেশনে ব্যুরেট এসিড দিয়ে পূর্ণ করতে হয়। কনিক্যাল ফ্লাস্কের ক্ষার নিয়ে নির্দেশকযুক্ত ব্যুরেট থেকে ড্রপ আকারে এসিডযুক্ত করতে করতে সমাপনী বিন্দুতে রং পরিবর্তন হলে বুঝতে
হবে টাইট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। টাইট্রেশনের সময় বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে ব্যুরেটের ট্যাপ (যা পূর্ব হতে ব্যুরেট স্ট্যান্ডে আটকানো থাকে) ধরতে হয় এবং কনিক্যাল ফ্লাস্ক ডান হাত দিয়ে ধরে ব্যুরেটের নিচে এনে আস্তে আস্তে নাড়াতে হয়, ব্যুরেট থেকে এসিড ফোঁটায় ফোঁটায় কনিক্যাল ফ্লাস্কে নিয়ে টাইট্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। সাধারণ ব্যুরেটগুলো 0-0 mL হতে 50-00 mL পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে। এভাবে তিনটি পাঠ নিতে হয়। তিনটি পাঠের মধ্যে সর্বোচ্চ পার্থক্য থাকবে 0.2 mL এর বেশি যেন না হয়।
এছাড়া মাইক্রো ব্যুরেট বিভিন্ন গবেষণা কাজ ও নির্দিষ্ট পরীক্ষা কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো 1-00 বা 0-05 মি.লি. হতে বিভিন্ন মাপের হয় এবং এগুলোও দাগাঙ্কিত থাকে। ব্যুরেট পাঠ নেওয়ার সময় তরলের নিম্ন অবতল যে দাগকে স্পর্শ করে সেই পাঠ নিতে হয়।
পিপেট ও পিপেটের ব্যবহার কৌশল (Pipette and Technique of Using Pipette)
পিপেট একটি দীর্ঘ কাচনল যার মাঝখানটা একটু স্ফীত। এটি সাধারণত ৫ হতে ২৫ মি.লি. পর্যন্ত মাপের হয়। এর নিচের অংশ ব্যুরেটের মতো অপেক্ষাকৃত সরু। স্ফীত অংশের উপরে ভর্তি লাইনে একটি দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে সে স্থানে নির্দিষ্ট আয়তন অবিকল মাপা যায়। পিপেটের সাহায্যে কনিক্যাল ফ্লাস্ক বা বিকারের দ্রবণ হতে মুখ দিয়ে টেনে ভর্তি লাইন পর্যন্ত নিতে হয়। এরপর হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পিপেটের উপর মুখটি বন্ধ করতে হয়।
যে ফ্লাস্কের দ্রবণকে টাইট্রেশন করতে হবে সেই ফ্লাস্কের তলদেশে পিপেটের নিচের অংশ ঠেকিয়ে উপরের বুড়ো আঙ্গুলটি সরিয়ে নিতে হয়। এভাবে পিপেট হতে সমস্ত দ্রবণ বিকারের / কনিক্যাল ফ্লাস্কের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। মুখ দিয়ে দ্রবণ টেনে তোলার সময় দ্রবণ মুখে যেতে পারে। এজন্য এসিড বা তীব্র ক্ষারীয় দ্রবণ তুলতে পিপেট ড্রপার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দাগাঙ্কিত মাইক্রো পিপেটও পাওয়া যায় যা গবেষণা বা বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন…