Site icon Chemistry Gurukul [ রসায়ন গুরুকুল ] GOLN

কোয়ান্টাম সংখ্যা

কোয়ান্টাম সংখ্যা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “পারমাণবিক গঠ” ইউনিট ১ এর অন্তর্ভুক্ত

 

কোয়ান্টাম সংখ্যা

 

কোয়ান্টাম সংখ্যা

আমরা ইতঃপূর্বে জেনেছি যে, হাইড্রোজেন পরমাণুর অতি সূক্ষ্ম বর্ণালির অস্তিত্বের উপস্থিতি বোর পরমাণু মডেল ব্যাখ্যা করতে পারে না। হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালির এ সূক্ষ্ম গঠন একটি মাত্র কোয়ান্টাম সংখ্যা n দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। এ সূক্ষ্ম রেখা ব্যাখ্যার জন্য চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যা প্রয়োজন হয়।

কোনো পরমাণুতে একটি ইলেকট্রনের অবস্থান অর্থাৎ ইলেকট্রন কক্ষপথের আকার-আকৃতি তথা নিউক্লিয়াস হতে কক্ষপথটির দূরত্ব, কক্ষপথটি বৃত্তাকার না উপবৃত্তাকার, কক্ষপথের ত্রিমাত্রিক দিক বিন্যাস, কক্ষপথে ইলেকট্রনের ঘূর্ণন ইত্যাদি জানার জন্য যে চারটি রাশি ব্যবহার করা হয়, সেই রাশিগুলোকে কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে।” পরমাণুতে কোনো ইলেকট্রনকে সম্পূর্ণভাবে বর্ণনা করার জন্য যে চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রয়োজন তা হলো :

১. প্রধান কোয়ান্টাম -সংখ্যা (Principal Quantum Number )

২. সহকারী কোয়ান্টাম -সংখ্যা (Subsidiary Quantum Number)

৩. চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম -সংখ্যা (Magnetic Quantum Number)

৪. ঘূর্ণন কোয়ান্টাম -সংখ্যা (Spin Quantum Number)

 

(ক) প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (n) : বোর পরমাণু মডেল অনুসারে ইলেকট্রনসমূহ নিউক্লিয়াসের চারদিকে কতগুলো অনুমোদিত বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে। ইলেকট্রনের এ আবর্তনশীল কক্ষপথকে প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে । একে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। n এর মান 1 থেকে ০০, কিন্তু এখন পর্যন্ত 1 থেকে 7 পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য n এর মান দ্বারা K, L, M, N ইত্যাদি অক্ষরকেও চিহ্নিত করা হয়। যেমন, n = 1 হলে ১ম শক্তিস্তর বা K শেল; n = 2 হলে ২য় শক্তিস্তর বা L শেল; n = 3 হলে তৃতীয় শক্তিস্তর বা M শেল বোঝায়। যেকোনো প্রধান শক্তিস্তরের সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা হলো 2n2 । (বর্তমানে, n = 4 পর্যন্ত 2n2 ফরমুলাটি প্রযোজ্য)।

(খ) সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা (1) : বোর মডেল পরমাণুর সূক্ষ্ম বর্ণালি রেখার গঠন ব্যাখ্যা করতে পারে না। বর্ণালির এ সূক্ষ্ম গঠন ব্যাখ্যা করার জন্য 1916 খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী সোমার ফিল্ড প্রস্তাব করেন যে, ইলেকট্রনগুলো শুধু বৃত্তাকার কক্ষেই (Circular orbits ) আবর্তন করে না বরং উপবৃত্তাকার কক্ষেও (elliptical orbits) আবর্তিত হয়। সুতরাং উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ইলেকট্রনের আবর্তনকে প্রকাশের জন্য যে কোয়ান্টাম -সংখ্যা প্রয়োজন হয় তাকে সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। একে / দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান একটি ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ, mvr = h√/(1+1) 2 t

এখানে / সহকারী কোয়ান্টাম সংখ্যা। / এর মান 0 হতে ( n − 1 ) পর্যন্ত হয়। / এর মান 0, 1, 2, 3 হলে উপশক্তিস্তরকে যথাক্রমে – s, p, d, f দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। sharp থেকে s, principal থেকে p, diffused থেকে d এবং fundamental থেকে f নেওয়া হয়েছে ।

 

 

যেকোনো উপশক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা হলো 2 ( 21 + 1),

এখানে / = 0, 1, 2, 3 — ইত্যাদি।

1 = 0 হলে s অরবিটাল বোঝায়; এতে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন থাকবে 2টি

1 = 1 হলে p অরবিটাল বোঝায়; এতে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন থাকবে 6টি

1 = 2 হলে d অরবিটাল বোঝায়; এতে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন থাকবে 10টি

1 = 3 হলে f অরবিটাল বোঝায়; এতে সর্বোচ্চ ইলেকট্রন থাকবে 14টি

যখন প্রধান শক্তিস্তর n = 2 তখন 1 = 0, 1 অতএব, এ প্রধান কোয়ান্টাম বা প্রধান শক্তিস্তরে একটি s ও একটি p উপশক্তিস্তর রয়েছে। এ উপশক্তিস্তরগুলোকে 2s ও 2p রূপে প্রকাশ করা যায়। এ উপশক্তিস্তরকেই ‘অরবিটাল’ বলা হয়।

 

 

(গ) চৌম্বকীয় কোয়ান্টাম সংখ্যা (m) : পরমাণুর বর্ণালি রেখাগুলো চৌম্বক ক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে চালনা করলে দেখা যায় যে, চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে বর্ণালি রেখাগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্ণালি রেখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানী জীম্যান এ প্রভাব লক্ষ করেন বলে এ প্রভাবকে জীম্যান প্রভাব বলে ।

 

 

 

পরমাণু মডেল বর্ণালির এ ধরনের বিভক্তি ব্যাখ্যা করতে পারেনি। চুম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে পরমাণুর বর্ণালি রেখার বিভক্তির উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, উপশক্তিস্তর পুনরায় চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ ভাগগুলোর প্রত্যেকটিকে অরবিটাল (orbital) বলে । চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যাকে m দ্বারা প্রকাশ করা হয়। m এর মান পূর্ণ সংখ্যা এবং এটা / এর মানের উপর নির্ভর করে। /-এর যেকোনো মানের জন্য m এর মান শূন্য (0) সহ ( 21+ 1) সংখ্যক হবে। (− থেকে + / পর্যন্ত শূন্যসহ) m এর মোট মান দ্বারা উপশক্তিস্তরে মোট অরবিটাল সংখ্যা বোঝায়। যেমন-

/ এর মান 0 হলে m = 0 অর্থাৎ s উপশক্তিস্তরে 1 টি অরবিটাল আছে।

/ এর মান 1 হলে m = + 10 – 1 অর্থাৎ p উপশক্তিস্তরে 3 টি অরবিটাল আছে।

1 এর মান 2 হলে m = + 2, + 1, 0 – 1 – 2 অর্থাৎ d উপশক্তিস্তরে 5 টি অরবিটাল আছে।

/ এর মান 3 হলে m = + 3 + 2, + 1, 0, 1, 2, 3 অর্থাৎ উপশক্তিস্তরে 7 টি অরবিটাল আছে।

 

প্রতিটি অরবিটালে সর্বাধিক 2টি করে ইলেকট্রন থাকতে পারে। সুতরাং s উপস্তরে সর্বাধিক 2টি; p উপস্তরে 6টি; d উপস্তরে 10টি এবং f উপস্তরে 14টি ইলেকট্রন থাকতে পারবে।

(ঘ) ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা (s) : যখন হাইড্রোজেন বা লিথিয়াম অথবা সোডিয়ামের বর্ণালি রেখা অতি উচ্চ বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা হয় তখন প্রতিটি বর্ণালি রেখাকে এক জোড়া বর্ণালি রেখা হিসেবে (a pair of lines) দেখা যায় যা দ্বিপদী (doublets) নামে পরিচিত। এ দ্বিপদী বর্ণালি রেখার গঠন সম্পর্কে 1925 খ্রিষ্টাব্দে গোউড স্মিথ (Goud-Smith) যে ব্যাখ্যা প্রদান তা নিম্নরূপ :

ইলেকট্রন যখন নিউক্লিয়াসের চারদিকে কক্ষপথে আবর্তন করে তখন এটি নিজ অক্ষের চারদিকেও আবর্তন করে। নিজ অক্ষে ইলেকট্রনের এরূপ আবর্তন ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণনের দিকে (clock-wise) ও ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে (anti clock-wise) হতে পারে ।

 

পরমাণুতে ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের জন্য যে কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহার করা হয় তাকে ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। একে ‘s’ দ্বার 1 +½ এবং 2 প্রকাশ করা হয় । ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের জন্য ‘s’এর দুটি মান প্রযোজ্য যা + : 2

সারণি-২.৩ : বিভিন্ন শক্তিস্তরে কোয়ান্টাম সংখ্যার ভিত্তিতে ইলেকট্রন বিন্যাস

 

কোয়ান্টাম সংখ্যার তাৎপর্য (Significance of quantum numbers):

পরমাণুতে একটি ইলেকট্রন সম্পর্কে জানতে হলে চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রয়োজন হয়। পরমাণুতে প্রত্যেকটি কোয়ান্টাম সংখ্যা ইলেকট্রন সম্পর্কে যে তথ্য প্রদান করে তা নিম্নরূপ :

 

১. প্রধান কোয়ান্টাম -সংখ্যা (n) হতে ইলেকট্রন কক্ষপথের আকার এবং ইলেকট্রনটি নিউক্লিয়াস হতে কত দূরে অবস্থিত তা জানা যায়।

২. সহকারী কোয়ান্টাম -সংখ্যা দ্বারা ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে অবস্থান করে তার আকৃতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে ।

৩. চৌম্বক কোয়ান্টাম -সংখ্যা দ্বারা ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে অবস্থান করে তার ত্রিমাত্রিক অবস্থান জানা যায় ।

৪. ঘূর্ণন কোয়ান্টাম -সংখ্যা দ্বারা ইলেকট্রনের ঘূর্ণন সম্পর্কে জানা যায়।

 

 

কোয়ান্টাম সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত ঃ

 

আরও পড়ুন…

 

Exit mobile version