Site icon Chemistry Gurukul [ রসায়ন গুরুকুল ] GOLN

গ্লাস ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিনার

গ্লাস ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিনার আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “কর্মমুখী রসায়ন” ইউনিট ৭ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

গ্লাস ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিনার

গ্লাস ক্লিনার প্রস্তুতি (Preparation of Glass Cleaner )

বাড়ির জানালা, দরজা, শোকেস, গাড়ির কাচ, টিভির স্ক্রিন, কাচের টেবিল ইত্যাদি পরিষ্কার করার জন্য যে স্বচ্ছ তরল ব্যবহার হয় তাকে গ্লাস ক্লিনার বলে। গ্লাস ক্লিনারের মূল উপাদান হলো অ্যামোনিয়ার দ্রবণ (NH, OH)। উপকরণ : বিভিন্ন ফরমূলায় ভিন্ন ভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে বিভিন্ন মানের টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত সব শ্রেণির মানুষের ব্যবহারের জন্য যে গ্লাস ক্লিনার তৈরি করা হয় তার উপকরণ নিম্নরূপ : লিকার অ্যামোনিয়া কাপ, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল কাপ, ভিনেগার, পানি, রং, ওয়েটিং এজেন্ট এবং ডিটারজেন্ট প্রয়োজনমতো ।

 

মনে রাখবেন গ্লাস ক্লিনারে NaOH ব্যবহার করা উচিত নয়—

গ্লাস ক্লিনারে কস্টিক সোডা (NaOH) কে ব্যবহার করা হয় না। কারণ— গ্লাসের প্রধান উপাদন SiO2 এর সাথে NaOH অতি সহজেই বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সিলিকেট (Na2SiO3) উৎপন্ন করে ।

2NaOH + SiO2 • Na2SiO3 + H2O

(SiO2 অম্লধর্মী অক্সাইড বলে এ বিক্রিয়া অতি সহজেই সম্পন্ন হয়) গ্লাসের ক্ষয় হয় এবং গ্লাসের উপরিতল অমসৃণ হয়ে যায়। গ্লাস ক্লিনারে অ্যামানিয়ার দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। অ্যামোনিয়া কাচের কোনো ক্ষয় করে না ।

গ্লাস ক্লিনারে লিকার অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হয়—

গ্লাসের উপরিতলে লেগে থাকা ময়লা, ধুলাবালি, তেল, গ্রিজ ইত্যাদিকে অপসারণের জন্য গ্লাস ক্লিনার ব্যবহার করা হয়। গ্লাস ক্লিনারে পরিষ্কারক হিসেবে 30-32% লিকার অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হয়। গ্লাসে লেগে থাকা ময়লার সাথে NH4OH অতি সহজে বিক্রিয়া করে কাচের উপরিতল থেকে অপসারিত করতে পারে কিন্তু NH4OH কখনোই কাচের অম্লধর্মী উপাদান SiO2 এর সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়ামের সিলিকেট লবণ উৎপন্ন করে না এবং কাচকে ক্ষয় করে না ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুতি (Preparation of Toilet Cleaner)

টয়লেট আমাদের প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। শহরের মানুষের টয়লেট শোবার ঘরের কাছাকাছি থাকে। আজকাল গ্রামেগঞ্জেও মানুষ সচেতন হয়েছে এবং টয়লেট বাথরুম বাসার ভিতরেই নির্মাণ করছে। এজন্য সুস্থ জীবনযাপনের জন্য টয়লেট বাথরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। তাই টয়লেটকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখা, ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করা, ফাঙ্গাস এবং অন্যান্য অণুজীব নির্মূল করে সুন্দর ও স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে উপযুক্ত টয়লেট ক্লিনার আবশ্যক ।

প্রস্তুত প্রণালি : দুই গ্যালন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্লাস্টিকের কন্টেইনার নিয়ে তাতে কস্টিক সোডা ২ কাপ, তরল সাবান – কাপ, ভিনেগার ২ চা চামচ, খাদ্য লবণ ১ চা চামচ মিশিয়ে উত্তমরূপে ঝাঁকিয়ে নেওয়া হয়। অতঃপর এর মধ্যে বাকি অংশ পাতিত পানি যোগ করে আবার ঝাঁকাতে হয়। – কাপ বোরাক্স যোগ করতে হয় এবং কন্টেইনারের মুখে ছিপি দ্বারা বন্ধ করে আরেকবার ঝাঁকিয়ে নেওয়া হয়। টয়লেট ক্লিনার প্রস্তুত হয়ে গেল ।

গ্লাস ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিনারের পরিষ্কারকরণের কৌশল (Cleaning Process of Toilet and Glass Cleaner)

গ্রিজ (grease), তেল, খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের দাগ, প্রস্রাব (urine) ইত্যাদি দ্বারা টয়লেট প্যান, বেসিন ইত্যাদি ময়লা হয় । একই কারণে গ্লাস ময়লা হয়। গ্লাসের মধ্যে তেল বা গ্রিজ লাগার পর ধূলি ময়লা পড়ে গ্লাস অপরিষ্কার হয়। বাথরুমের মেঝে, টয়লেট প্যান, বেসিন ইত্যাদি পরিষ্কার করণের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্লিনার পাওয়া যায় । এসব ক্লিনারের প্রধান উপাদান হচ্ছে কস্টিক সোডা। বাজারে যে গ্লাস ক্লিনারগুলো পাওয়া যায় তার প্রধান উপাদান অ্যামোনিয়া।

ক) গ্লাস ক্লিনারের পরিষ্কারকরণ কৌশল :

গ্লাস ক্লিনারে রয়েছে অ্যামোনিয়া, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, ডিটারজেন্ট প্রভৃতি পরিষ্কারকারক উপাদান। এগুলো গ্লাসে লেগে থাকা ময়লাকে দূরীভূত করে। গ্লাসের ময়লা মূলত ধূলিবালি, গ্রিজ বা চর্বির সমন্বয়ে গঠিত। গ্লাস ক্লিনারে ব্যবহৃত ডিটারজেন্টের দুটি প্রান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ঋণাত্মক প্রান্তটি পানিকে আকর্ষণ করে। এ প্রান্তকে হাইড্রোফিলিক প্রান্ত বলে যা ময়লাযুক্ত কাচের তলকে ভিজিয়ে দেয়। ডিটারজেন্টের অপর হাইড্রোফোবিক প্রান্ত পানিতে অদ্রবণীয় বলে পানির উপরে একটি পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। হাইড্রোফোবিক অংশ লম্বা লেজযুক্ত হওয়ায় তা ময়লাকে সহজেই ঘিরে ফেলে ও ময়লার সূক্ষ্মকণার সাথে লেজকে সংযুক্ত করে।

এবার, আইসোপ্রোপাইন অ্যালকোহলের ক্রিয়ায় ময়লা দ্রবীভূত হয়। তখনি মূল উপাদান অ্যামোনিয়া ময়লাযুক্ত ডিটারজেন্টকে গ্লাস থেকে আলাদা করে ফেলে। এবার পানি দ্বারা আলোড়িত করলে ময়লা ধৌত হয়ে যায় । এক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া বিষাক্ত যৌগ হওয়ায় জীবাণুকে ধ্বংস করে। তবে জীবাণুনাশক হিসেবে গ্লাস ক্লিনারে ইথিলিন গ্লাইকলও ব্যবহৃত হয়।

(খ) টয়লেট ক্লিনারের পরিষ্কারকরণ কৌশল : টয়লেট ক্লিনারের প্রধান উপাদান হলো কস্টিক সোডা (NaOH)। টয়লেটে উৎপন্ন ময়লা তৈল চর্বি দ্বারা গঠিত। সুতরাং টয়লেট ক্লিনারের মূল উপাদান কস্টিক সোডার সাথে ময়লার তৈল বা চর্বি নিম্নরূপে বিক্রিয়া করে সাবান ও গ্লিসারিন উৎপন্ন করে।

বিক্রিয়ায় উৎপন্ন সাবান ও টয়লেট ক্লিনারে ব্যবহৃত সাবানের প্রত্যেকেরই দুটি অংশ থাকে। একটি পানি আকর্ষী বা হাইড্রোফিলিক এবং অপরটি পানি বিকর্ষী বা হাইড্রোফোবিক অংশ । হাইড্রোফিলিক অংশ পানিতে দ্রবীভূত হয় এবং হাইড্রোফোবিক অংশটি দীর্ঘ লেজ বা শিকলবিশিষ্ট হওয়ায় ময়লাকে ঘিরে ধরে এবং পানির উপর একটি সূক্ষ্ম স্তর সৃষ্টি করে। একসময় ময়লার কণার মধ্যে হাইড্রোফোবিক অংশের লেজ ঢুকে পড়ে । এবার পানিযোগে আলোড়িত করলে ময়লাগুলো ফ্লোর হতে আলাদা হয়ে ভেসে ওঠে, কিন্তু কণাগুলো সমধর্মী চার্জবিশিষ্ট হওয়ায় এদের মধ্যে বিকর্ষণ কাজ করে বলে এরা জমাট বাঁধতে পারে না। তখন ময়লার সাথে তীব্র ক্ষারের বিক্রিয়ায় দ্রবণীয় যৌগ উৎপন্ন হয়। এরপর পানি সহযোগে ধুয়ে ফেললে টয়লেট ঝকঝকে দেখায় ।

এক্ষেত্রে টয়লেট ক্লিনারের উপাদানগুলো নিম্নরূপে জীবাণুনাশক ও পরিষ্কারক হিসেবে বিক্রিয়া করে—

কস্টিক সোডা ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের প্রোটিনকে বিশ্লেষিত করে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে বলে জীবাণুনাশক। আবার দুর্গন্ধের জন্য দায়ী রাসায়নিক পদার্থ যেমন বিভিন্ন জৈব যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে। ফলে দুর্গন্ধনাশক হিসেবে কাজ করে।

এক্ষেত্রে, অ্যামিনো জৈব যৌগ, অ্যামাইড, এস্টার প্রভৃতি দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী যৌগগুলো কস্টিক সোডার সাথে বিক্রিয়ায় অন্য যৌগে রূপান্তরিত হয় । আবার খর পানির বিভিন্ন লবণ টয়লেটে জমে বাদামি বর্ণের দাগ তৈরি করে।

অথবা প্রস্রাবের ইউরেয়িক এসিড, অ্যামোনিয়াম সায়ানেট ইত্যাদির কারণে সৃষ্ট দাগ দূর করতে টয়লেট ক্লিনারের কস্টিক সোডা যোগ করে ঘষলে দাগ উঠে যায়। এক্ষেত্রে কস্টিক সোডা ঘর্ষণকারী (abrasive বা Seouring) পদার্থ হিসেবে বিভিন্ন লবণ ও জৈব পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে ।

FeCl3 + 3NaOH → Fe (OH)3 + 3NaCl

MgSO4 + 2NaOH → Na2SO4 + Mg(OH)2

অনেক সময় কিছু দাগ কস্টিক সোডার উপস্থিতিতে বর্ণ পরিবর্তন করে । সেক্ষেত্রে ব্লিচিং পদার্থ (Bleaching agent) হিসেবে বিভিন্ন পার অক্সাইড বা সোডিয়াম ও ক্যালসিয়ামের হাইপোক্লোরাইড ব্যবহার করা হয়।

 

 

ক্লোরাইড লবণ মিশ্রিত কষ্টিক সোডা নিম্নোক্ত বিক্রিয়ানুযায়ী হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও জায়মান অক্সিজেন তৈরি করে যা শক্তিশালী জারক ও জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে ।

2NaCl → 2Na+ + 2CI

2C1-2e→ Cl₂

OH + Cl2 – → HOCI + CI

HOCI- → HCl + [O]

জীবাণু [O], মৃত জীবাণু

গ্লাস ক্লিনার ও টয়লেট ক্লিনারের মধ্যে পার্থক্য—

 

 

 

আরও পড়ুন…

Exit mobile version