তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “পারমাণবিক গঠ” ইউনিট ১ এর অন্তর্ভুক্ত।
তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালি
তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালি (Electromagnetic Spectrum):
1873 খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ বিজ্ঞানী জেম্স ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (James Clerk Maxwell) প্রস্তাব করেন যে, আলোক তথা রেডিয়েশনের তড়িৎ চৌম্বক ধর্ম বর্তমান। তিনি প্রমাণ করেন যে, একটি পরিবর্তনশীল তড়িৎ বল চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে অর্থাৎ রেডিয়েশনের সাথে তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্র সম্পৃক্ত। এরা পরস্পর পরস্পরের সাথে সমকোণে শূন্যে বিন্যস্ত (orientation in space) থাকে ।
1901 সালে বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (Max Plank) রেডিয়েশনের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। তিনি রেডিয়েশনকে শক্তির এককের অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ হিসেবে উল্লেখ করেন। শক্তির এ একককে কোয়ান্টাম বলে । ল্যাটিন শব্দ কোয়ান্টাম মানে How much অর্থাৎ কতটুকু। প্ল্যাঙ্ক-এর মতে একটি উত্তপ্ত পদার্থ থেকে আলো বিচ্ছিন্নভাবে (discontinuously) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্যাকেট আকারে নির্গত হয়। প্রতিটি প্যাকেটের শক্তির পরিমাণ E এবং কম্পাঙ্ক ↓ হলে, শক্তির পরিমাণ E cv বা, E = hv. এখানে h = 6-626 × 10-27 erg.sec.
প্ল্যাঙ্ক সমীকরণ (E = hv) কে আলোর ক্ষেত্রে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায় :
(E = nho)
n = 1, 2, 3, 4,
এখানে n এর মান সব সময় পূর্ণসংখ্যা হবে, কোনোভাবেই ভগ্নাংশ হবে না । 1905 সালে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ফোটন (photon) মতবাদ প্রস্তাব করেন। এ মতবাদ অনুসারে রেডিয়েশন ঝাঁকে ঝাঁকে কণা বা ফোটনের সমষ্টিরূপে প্রবাহিত হয়ে থাকে । বিভিন্ন ধরনের তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিম্নে দেওয়া হলো :
তড়িৎ চুম্বকীয় বর্ণালির অঞ্চলসমূহ (Different Regions of Electromagnetic Spectrum)
তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ রশ্মিসমূহকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ক্রম বৃদ্ধি অনুসারে প্রধান সাতটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। যথা—
১. গামা (y) রশ্মি অঞ্চল : গামা রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 0.0005-015 nm পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় এ তরঙ্গ অধিক শক্তিসম্পন্ন। এ রশ্মি জৈব যৌগের বিশ্লেষণে বর্ণালিমিতিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।
২. রঞ্জন রশ্মি (X-ray) অঞ্চল : রঞ্জন রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 0.01-10nm পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। রঞ্জন রশ্মির ব্যবহার ব্যাপক । যেমন— এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি, এক্সরে নিঃসরণ পদ্ধতিতে এ রশ্মি ব্যবহৃত হয়।
৩. অতিবেগুনি রশ্মি (UV) অঞ্চল : এ অঞ্চলের তরঙ্গদৈর্ঘ্য 10–380 nm পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলের বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের UV রশ্মি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন, 300–320 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের UV-রশ্মি চিকিৎসাক্ষেত্রে লাইট থেরাপি, 270–360 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি প্রোটিন বিশ্লেষণের কাজে, 200-400nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি ড্রাগ শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয় ।
৪. দৃশ্যমান (Visible) অঞ্চল : এ অঞ্চলটি 380–780nm পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চল VIBGYOR অঞ্চলরূপে চিহ্নিত। পরমাণুর সর্ববহিঃস্তরের ইলেকট্রন এ অঞ্চলের রশ্মি শোষণ বা বিকিরণ করে বর্ণালি সৃষ্টি করে।
৫. অবলোহিত অঞ্চল : অবলোহিত অঞ্চলটি Near – IR; Middle-IR এবং Far-IR এ তিনটি অংশে বিভক্ত। জৈব যৌগের গঠন নির্ণয়ে এ রশ্মি ব্যবহৃত হয়। এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিসর নিম্নরূপ :
Near-IR অঞ্চল : 08-25um
Middle-IR অঞ্চল : 2.5-25 pum
Far-IR অঞ্চল : 25-1000 pm
(1 um = 1 × 10″ m)
৬. মাইক্রোওয়েভ্স (Microwaves) অঞ্চল : এ অঞ্চলের রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 100 pm হতে 1.0 cm পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে ।
৭. রেডিওওয়েভ্স (Radiowaves) অঞ্চল : এ অঞ্চলের রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য 100 cm হতে 5 m পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। রেডিও এন্টেনাতে উচ্চ কম্পাঙ্কের পর্যায়ক্রমিক বিদ্যুৎ (AC) প্রবাহ দ্বারা এসব তরঙ্গের সৃষ্টি করা হয়।
আরও পড়ুন…