তাপ রাসায়নিক সূত্রাবলি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “রাসায়নিক পরিবর্তন” ইউনিট ৫ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
তাপ রাসায়নিক সূত্রাবলি
ল্যাভয়সিয়ে ও হেসের সূত্র (Lavoisier and Hess’s Laws)
শক্তির নিত্যতা সূত্রের উপর ভিত্তি করে তাপ রসায়নে বিক্রিয়ার এনথালপি পরিবর্তন ব্যাখ্যার জন্য দুটি সূত্র আছে। যেমন—
১। ল্যাভয়সিয়ের সূত্র (Law of Lavoisier) : ১৭৮০ সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে ও ল্যাপলাস সূত্রটি প্রকাশ করেন। এ সূত্রানুসারে, “কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে পরিমাণ এনথালপির পরিবর্তন ঘটে ঐ বিক্রিয়াটি বিপরীত দিকে সংঘটিত হলেও ঐ একই পরিমাণ এনথালপির পরিবর্তন ঘটে, তবে চিহ্ন বিপরীত হয়।”
(i) N2(g) + 3H2(g) 2NH3(g); AH = -92-2 kJ
(ii) 2NH3 (g) N2 (g) + 2H2(g); AH = +92.2 kJ
উপরের উদাহরণে, (i) নং বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক N2 ও 3H2 এর মোট বন্ধন শক্তি উৎপাদের, 2NH3 মোট বন্ধন শক্তি অপেক্ষা কম।
আমরা জানি, যেকোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া বন্ধন ভাঙন ও বন্ধন গঠনের মাধ্যমে ঘটে। এক্ষেত্রে বিক্রিয়কের বন্ধন ভাঙতে শক্তি প্রয়োজন হয় এবং উৎপাদের বন্ধন গঠনের সময় শক্তি নির্গত হয়। তাই (i) নং বিক্রিয়ার N2 ও 3H2 এর মোট বন্ধন ভাঙতে প্রয়োজনীয় শক্তির চেয়ে 2NH3 এর বন্ধন গঠনে নির্গত শক্তি বেশি হওয়ায় বিক্রিয়াটিতে – 92.2 kJ তাপ উৎপন্ন হয়। অপরদিকে (ii) নং বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক 2NH3 এর বন্ধন ভাঙতে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদ N2 ও 3H2 এর মোট বন্ধন গঠনে নির্গত শক্তির চেয়ে বেশি হওয়ায় বিক্রিয়ায় তাপ শোষিত হয়।
সুতরাং কোনো যৌগের গঠন তাপ তার বিয়োজন তাপের সমান কিন্তু বিপরীত।
২। হেসের সূত্র (Law of Hess) : ১৮৪০ সালে বিজ্ঞানী জি.এইচ. হেস তাপ রসায়নের যে সূত্রটি প্রকাশ করেন তা হেসের তাপ সমষ্টিকরণ সূত্র নামে পরিচিত। সূত্রটি হচ্ছে- “যদি কোনো বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক ও উৎপাদ স্থির থাকে (তাদের ভৌত অবস্থা ও একই) তবে বিক্রিয়াটি এক বা একাধিক ধাপে সংঘটিত হোক না কেন মোট তাপ শক্তি পরিবর্তন সর্বদা একই হবে।”
অর্থাৎ কোনো বিক্রিয়ার তাপের পরিবর্তন ঐ বিক্রিয়ার প্রারম্ভিক অবস্থা ও শেষ অবস্থার উপর নির্ভর করে। বিক্রিয়ার পদ্ধতি বা বিক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন করা হলো তার উপর নির্ভর করে না। যেমন— কোনো একটি বিক্রিয়ক A এবং উৎপাদ P। এক্ষেত্রে বিক্রিয়ক A সরাসরি P-তে পরিণত হতে পারে। আবার A হতে উৎপাদ B গঠন করতে পারে যা পরবর্তীতে P-তে পরিণত হতে পারে ।
প্রথম পথে A → P এক ধাপে সম্পন্ন হয় এবং তাপের পরিবর্তন AH।।
ল্যাভয়সিয়ে ও হেসের সূত্র প্রয়োগ করে বিক্রিয়া তাপ নির্ণয়
সাধারণত যেসব রাসায়নিক বিক্রিয়ার তাপ সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় না তাদের ক্ষেত্রে হেসের সূত্র ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে বিক্রিয়া তাপ নির্ণয় করা যায়। যেমন, ধীরগতিসম্পন্ন বা অসম্পূর্ণ বিক্রিয়াসমূহের বিক্রিয়া এনথালপি নির্ণয় করতে হেসের সূত্র প্রয়োগ করা হয় । মাটির নিচে গ্রাফাইট কার্বন ধীরে ধীরে হীরকে পরিণত হতে দীর্ঘ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রাফাইট থেকে হীরকে পরিণত হওয়ার এই ধীরগতির বিক্রিয়ার তাপের পরিবর্তন নির্ণয় করা যায় না। কিন্তু নিচের বিক্রিয়ার সাহায্যে পরোক্ষভাবে গ্রাফাইট কার্বন হীরকে পরিণত হওয়ায় তাপের পরিবর্তন নির্ণয় করা যায় ।
উদাহরণ :
গঠন তাপ (Heat of Formation) :
প্রমাণ অবস্থায় কোনো যৌগের উপাদান মৌল সমূহ থেকে ঐ যৌগের এক মোল উৎপাদনকালে তাপের যে পরিবর্তন ঘটে তাকে যৌগটির প্রমাণ গঠন তাপ বলা হয়। প্রমাণ অবস্থা বলতে 25°C ও 1 atm চাপকে বুঝায় এবং গঠন তাপকে H; দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর একক কিলোজুল প্রতি মোল বা kJmol
আরও পড়ুন…