বাজারের খাদ্য লবণ থেকে বিশুদ্ধ NaCl প্রস্তুতি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “ব্যবহারিক রসায়ন” ইউনিট ৯ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
বাজারের খাদ্য লবণ থেকে বিশুদ্ধ NaCl প্রস্তুতি
সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণের বিশুদ্ধ কেলাস প্রস্তুতি
তত্ত্বঃ সমুদ্রের পানি থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড সংগ্রহ করা হয়। রকসল্টও সোডিয়াম ক্লোরাইড। এই দুই উৎস থেকে প্রাপ্ত NaCl এ বিভিন্ন দ্রবণীয় অপদ্রব্য বা ভেজাল যথা- CaCl2, MgCl2, Na2SO4 এবং MgSO দ্রবীভূত থাকে। এছাড়াও বেশ কিছু অদ্রবণীয় ভেজালও থাকে। নমুনা লবণকে প্রথমে দ্রবীভূত করার পর অদ্রবণীয় ভেজাল গুলোকে পরিস্রাবণের সাহায্যে পৃথক করা হয়।
পরে, দ্রবণকে উত্তপ্ত করে সম্পৃক্ত করার পর দ্রবণে সামান্য পরিমাণ HCI যোগ করলে বা HCl গ্যাস পরিচালনা করলে দ্রবণে CI” আয়নের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এইভাবে দ্রবণে Na+ ও CI আয়নের আয়নিক গুণফল NaCl এর দ্রাব্যতা গুণাংককে অতিক্রম করে। তাই সাধারণ আয়ন প্রভাবের জন্য দ্রবণ থেকে বিশুদ্ধ NaCl কেলাস আকারে বের হয়ে আসে এবং দ্রবণীয় ভেজালগুলো দ্রবণেই থেকে যায়।
প্রয়োজনীয় উপকরণ ও রাসায়নিক দ্রব্যঃ কঠিন খাদ্য লবণের নমুনা, ২টি বিকার, ১টি ফানেল, চিনামাটি বা পোর্সেলিনের বেসিন, ত্রি- পদী স্ট্যান্ড, কাঁচদন্ড, তারজালি এবং ফিল্টার কাগজ।

কার্যপদ্ধতি (Procedure)
১। 250 সেমি আয়তনের একটি বিকারে 100 সেমি পানি নিয়ে এতে প্রায় 35 গ্রাম অবিশুদ্ধ NaCl যোগ করে একটি কাঁচাদন্ডের সাহায্যে উত্তমরূপে নেড়ে দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে।
২। এর পর ফিল্টার কাগজের মাধ্যমে দ্রবণটিকে পরিস্রাবণ করে পরিস্রুত দ্রবণ অন্য বিকারে নিতে হবে।
৩| বিকারটিকে ত্রি-পদী স্ট্যান্ডের উপরে স্থাপিত তারজালির উপর বসিয়ে বুনসেন দীপের সাহায্যে উত্তপ্ত করে দ্রবণটিকে ঘনীভূত (সম্পৃক্ত) করতে হবে। দ্রবণটি সম্পৃক্ত হয়েছে কিনা জানার জন্য উত্তপ্ত ঘনীভূত দ্রবণের কিছু পরিমাণ একটি পরীক্ষা নলে নিয়ে ট্যাপের পানিতে ঠান্ডা করতে হবে । ঠান্ডা দ্রবণে কেলাস দেখা গেলেই দ্রবণটি সম্পৃক্ত হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
8। সম্পৃক্ত উত্তপ্ত দ্রবণকে কিছুটা শীতল করার পর দ্রবণে সামান্য পরিমাণ বিশুদ্ধ গাঢ় HCI যোগ করতে হবে। এর ফলে বিশুদ্ধ NaCl এর কেলাস উৎপন্ন হয়ে নিচের দিকে জমা হতে থাকবে ।
৫ ৷ উপরের স্বচ্ছ দ্রবণে আরও কিছু পরিমাণ বিশুদ্ধ গাঢ় HCl যোগ করলে কেলাসন প্রক্রিয়া শেষ হবে।
৬। পরিস্রাবণের সাহায্যে দ্রবণ থেকে NaCl এর কেলাস পৃথক করতে হবে এবং কেলাসগুলো NaCl এর গাঢ় দ্রবণে ধৌত করতে হবে।
৭। প্রাপ্ত কেলাসগুলোকে পোর্সেলিন বা চিনা মাটির ছড়ানো বেসিনে নিয়ে সামান্য উত্তপ্ত করুন। এর ফলে কেলাসের গায়ে লেগে থাকা HCl বাষ্পাকারে চলে যাবে । এভাবে প্রাপ্ত প্রায় শুষ্ক কেলাসগুলোকে বায়ুতে রেখে শুষ্ক করা হয়।
৮। দ্রুত শুষ্ক করার জন্য কেলাসগুলোকে অনার্দ্র CaCl2 পূর্ণ একটি শোষকাধারে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর বিশুদ্ধ ও শুষ্ক NaCl কেলাস পাওয়া যায় ।
পরীক্ষণের কার্যকারিতা (Efficiency):
১। বিশুদ্ধ কেলাসের শতকরা উৎপাদন: নিচের সমীকরণ ব্যবহার করে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ কেলাসের শতকরা উৎপাদন নির্ণয় করা যায়:
শতকরা উৎপাদন নির্ণয় করে নমুনার বিশুদ্ধতা এবং পরীক্ষণের কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ।
২। কেলাসের স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা অবলোকন করেও পরীক্ষণের কার্যকারিতা অর্থাৎ উৎপন্ন কেলাসের গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন…