বিক্রিয়ার হার এর উপর প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ামকসমূহ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “রাসায়নিক পরিবর্তন” ইউনিট ৫ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
বিক্রিয়ার হার এর উপর প্রভাব বিস্তারকারী নিয়ামকসমূহ
বিক্রিয়ার গতির উপর তাপমাত্রার প্রভাব (Affect of Temperature on the Rate of Reaction)
তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। এটি বোঝার জন্য নিচের পরীক্ষাটি সম্পন্ন করুন। A, B ও C তিনটি টেস্টটিউবে সমান ঘনমাত্রার সোডিয়াম থায়োসালফেট দ্রবণ 3ml করে নিয়ে তাদেরকে যথাক্রমে বরফ শীতল পানি, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ও গরম পানির বীকারে নিম্নরূপে স্থাপন করুন ।
এরপর প্রত্যেকটি টেস্টটিউবে সমান ঘনমাত্রার 2ml HCl একইসাথে যোগ করুন এবং লক্ষ করুন। কোন টেস্টটিউবটি আগে ঘোলা হয়? কোন টেস্টটিউবটি পরে ঘোলা হয়? কারণ কী? দ্রবণ ঘোলা হওয়ার কারণ কী? টেস্টটিউবগুলোতে নিম্নরূপ বিক্রিয়া ঘটে—
এক্ষেত্রে বিক্রিয়ায় কঠিন সালফার উৎপন্ন হয় যা পানিতে অদ্রবণীয় হওয়ায় দ্রবণগুলো ক্রমশ ঘোলাটে হয়। C টেস্টটিউবটি সবচেয়ে দ্রুত ঘোলা হয়। কারণ এ টেস্টটিউবের তাপমাত্রা বেশি থাকায় বিক্রিয়ক অণুগুলোর গড় গতিবেগ বেশি থাকে। বিক্রিয়ার শর্ত হচ্ছে, বিক্রিয়ক অণুগুলো পরস্পরের সাথে একটা ন্যূনতম শক্তি নিয়ে ধাক্কা বা সংঘর্ষ হতে হবে। C টেস্টটিউবের তাপমাত্রা বেশি থাকায় বিক্রিয়ার জন্য ন্যূনতম শক্তি অর্জনকারী অণুর সংখ্যা বেশি থাকে। ফলে এ টেস্টটিউবে সংঘর্ষের হার সবচেয়ে বেশি হয়। তাই এ টেস্টটিউবের দ্রবণ দ্রুত ঘোলা হয় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায় ।
আরহেনিয়াস সমীকরণ এবং সক্রিয়ণ শক্তি
১৯৮৯ সালে বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস বিক্রিয়ার হারের উপর তাপমাত্রার প্রভাব পরীক্ষা করে দেখতে পান যে সাধারণভাবে প্রতি ১০° সে. তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রায় সব বিক্রিয়ার হার দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পায় । এর কারণ হচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ক অণুসমূহের গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। ফলে একক সময়ে বিক্রিয়কের অণুসমূহের সংঘর্ষ হার বৃদ্ধি পায় এবং অধিক সংখ্যক অণু বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সক্রিয়ণ শক্তি অর্জন করে। বিক্রিয়ক অণুসমূহের সকল সংঘর্ষইবিক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয় না।
বিক্রিয়ক অণুসমূহ একটি ন্যূনতম শক্তির চেয়ে কম শক্তি নিয়ে সংঘর্ষে অংশগ্রহণ করলে বিক্রিয়া সংঘটিত হয় না। এক্ষেত্রে ঐ ন্যূনতম শক্তি বা তার বেশি শক্তি নিয়ে বিক্রিয়ক অণুসমূহের সংঘর্ষ ঘটলে তবেই বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। সুতরাং ন্যূনতম যে শক্তি নিয়ে বিক্রিয়ক অণুসমূহ পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ এ লিপ্ত হলে বিক্রিয়া সংঘটিত হয় ঐ ন্যূনতম শক্তিকে সক্রিয়ণ (Activation Energy) শক্তি বলে। একে Ea দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সাধারণত কোনো বিক্রিয়ার Ea নির্দিষ্ট এবং তা তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু প্রভাবক E♭-কে প্রভাবিত করে।
বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস বিক্রিয়ার হার ধ্রুবক, তাপমাত্রা ও সক্রিয়ণ শক্তির মধ্যকার সম্পর্কের একটি সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আরহেনিয়াস সমীকরণ নামে পরিচিত। কোনো বিক্রিয়ার সক্রিয়ণ শক্তি Ea, কেলভিন তাপমাত্রা T বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়া হারের Exponential বৃদ্ধির সম্পর্ক হচ্ছে- বিক্রিয়ার হার oceE/RT আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ক অণুসমূহের কার্যকর সংঘর্ষ সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় এবং বিক্রিয়ার হার সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায় ।
বিক্রিয়ার গতির উপর চাপের প্রভাব (Affect of Pressure on the Rate of Reaction)
বিক্রিয়ক পদার্থ কঠিন বা তরল হলে ঐ বিক্রিয়ার গতির উপর চাপের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তবে বিক্রিয়ক যদি গ্যাসীয় হয় অথবা একটি বিক্রিয়ক গ্যাস ও অপর বিক্রিয়ক কঠিন বা তরল হয় তা হলে চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায়। কারণ চাপ বৃদ্ধিতে গ্যাসের আয়তন সংকুচিত হয়। এতে একক আয়তনে গ্যাসের অণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিক্রিয়ক সংঘর্ষ হার বৃদ্ধি পায়। তাই বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি পায় ৷ এক্ষেত্রে নিচের পরীক্ষাটি সম্পন্ন করুন।
উপরের চিত্রের অনুরূপে CO2 গ্যাস প্রস্তুত করে একটি ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের সাহায্যে সিলিন্ডারের চুনের পানির উপর কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস সংগ্রহ করি। পরে সিলিন্ডারের মধ্যে পিস্টন নিয়ে আস্তে চাপ প্রয়োগ করলে দেখা যাবে চুনের পানি ঘোলা হচ্ছে। পিস্টনের উপর চাপ যত বাড়ানো যায় চুনের পানি তত দ্রুত ও বেশি পরিমাণে ঘোলা হয় ।
আরও পড়ুন…