Site icon Chemistry Gurukul [ রসায়ন গুরুকুল ] GOLN

ব্যাপন ও অনুব্যাপন

ব্যাপন ও অনুব্যাপন আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “পদার্থের অবস্থা” ইউনিট ৪ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

ব্যাপন ও অনুব্যাপন

ব্যাপন ও নিঃসরণ (Diffusion and Effusion)

ব্যাপন (Diffusion) : এক গ্লাস পরিষ্কার পানিতে ২/১টি KMnO4 এর দানা ছেড়ে দিন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন দেখবেন গ্লাসের পানি নিচে থেকে ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে হালকা বেগুনি বর্ণ হচ্ছে। আবার, একটি বড় আলুর উপরে কেটে একটি গর্ত করে খাদ্য লবণের ঘন দ্রবণ যোগ করুন। আলুটির নিচের অংশ কেটে একটি পিরিচের পানিতে বসিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পর দেখবে পিরিচের পানি আলুর ভিতর দিয়ে লবণের দ্রবণে প্রবেশ করছে। প্রথম ক্ষেত্রে পানিতে KMnO4 এর অণু পানিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে লবণ পানিতে আরও পানি প্রবেশ করে ঘন দ্রবণকে পাতলা দ্রবণে পরিণত করছে। এগুলোকে ব্যাপন প্রক্রিয়া বলে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় কোনো গ্যাসীয় বা তরল পদার্থ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্য কোনো গ্যাসীয় বা তরল মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বা অনুপ্রবেশ করে তাকে ব্যাপন বলে।

মনে রাখবেন : গ্যাসীয় পদার্থের অগুলো বিচ্ছিন্নভাবে অবিরাম দ্রুত গতিতে ছোটাছুটি করে। গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলোর গতির কারণে একটি গ্যাসের অণুগুলোর মধ্যে ফাঁকা স্থানের মধ্যে অপর গ্যাসের অণুগুলো প্রবেশ করে সমসত্ত্বভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কোনো আবদ্ধ পাত্রে গ্যাস রাখলে গ্যাসীয় অণুগুলোর গতির কারণে পােেত্রর দেয়ালের উপর চাপ প্রয়োগ করে। যদি পাত্রের দেয়াল | ছিদ্র যুক্ত হয় তবে গ্যাসের অণুগুলোর গতির কারণে গ্যাস দেয়ালের সূক্ষ্ম ছিদ্র পথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এটিই কোনো গ্যাসের ব্যাপনের মূল কারণ।

ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাসীয় কণার ঘনমাত্রা পাত্র বা কক্ষের সকল স্থানে সমান হয়। যেমন— ঘরের মধ্যে কোনো জায়গায় একটি সুগন্ধির শিশি বা বোতল ছিপি খুলে রেখে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে সমগ্র ঘরের মধ্যে সুগন্ধি বা সেন্ট ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমগ্র ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

নিঃসরণ (Effusion) : যে প্রক্রিয়ায় বাহ্যিক চাপের প্রভাবে কোনো গ্যাসীয় পদার্থ সরু ছিদ্র পথে একমুখীভাবে বেরিয়ে আসে বা নির্গত হয় তাকে নিঃসরণ বা অনুব্যাপন বলে। চাপ P গ্যাসের অণু Қо গ্যাসের অণু ব্যাপন অনুব্যাপন চিত্র-৮.১

 

উদাহরণস্বরূপ, গ্যাসের পাইপ ছিদ্র হয়ে গেলে যে পথ দিয়ে সজোরে গ্যাস বের হয়ে আসে তার নাম নিঃসরণ। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে প্রতি একক সময়ে কোনো গ্যাসের যে পরিমাণ ব্যাপিত বা নিঃসরিত হয় তাকে ঐ গ্যাসটির ব্যাপন বা নিঃসরণ হার বলে। t সময়ে কোনো গ্যাসের V আয়তন ব্যাপিত হলে গ্যাসের ব্যাপন হার r = V/t

বিভিন্ন গ্যাসের ব্যাপন হার বিভিন্ন হয়। ব্যাপন হার অণু বা পরমাণুর ভর, তাপমাত্রা, ঘনত্ব ইত্যাদির উপর নির্ভর করে । সাধারণত গ্যাসের অণুর ভর বেশি হলে তার ব্যাপন হার কম এবং ভর কম হলে ব্যাপন হার বেশি হয়। যেমন- H2 NH, এর মধ্যে H2 গ্যাসের ব্যাপন হার NH, এর তুলনায় বেশি। কারণ H2 অণুর ভর NH3 অণুর তুলনায় কম।

 

মনে রাখবেন : কোন আবদ্ধ পাত্রে গ্যাস রাখলেও সে পাত্র হতে গ্যাস খুব ধীরে হলেও বের হয়ে আসে। পাত্রের গায়ের কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি হলেও এর অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক ফাঁকা স্থান থাকার কারণে পাত্রের প্রাচীরের অংশ সচ্ছিদ্র হয়। এ সূক্ষ্ম ছিদ্র | পথের মধ্য দিয়ে গ্যাস ধীরে ধীরে বের হয়ে আসে। কোনো পাত্রের দেয়ালের ভিতর দিয়ে গ্যাসের এ ধরনের বের হয়ে আসাকেও ব্যাপন বলা হয় ।

গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র (Diffusion law of Graham) :

1829 খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী টমাস গ্রাহাম গ্যাসের ব্যাপনের হারের সাথে ঘনত্বের একটি সম্পর্কসূচক সূত্র প্রকাশ করেন যা গ্রাহামের গ্যাস ব্যাপন সূত্র নামে পরিচিত।

সূত্রটি নিম্নরূপ : “নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে কোনো গ্যাসের ব্যাপনের হার এর ঘনত্বের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক । ”

 

 

 

আরও পড়ুন…

Exit mobile version