Site icon Chemistry Gurukul [ রসায়ন গুরুকুল ] GOLN

ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ

ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “পর্যায় সারণি ও মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম” ইউনিট ২ এর অন্তর্ভুক্ত

 

ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ

ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ

ইলেকট্রন বিন্যাস অনুযায়ী মৌলসমূহকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যা নিম্নরূপ :

(১) s-ব্লক মৌল,

(২) p-ব্লক মৌল,

(৩) d-ব্লক মৌল,

(8) f-ব্লক মৌল ।

কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের শেষ ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে প্রবেশ করবে তাকে ঐ ব্লকের মৌল ধরা হয়। (8) f-ব্লক মৌল ।

(১) s-ব্লক মৌল :

যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে শেষ ইলেকট্রনটি s- অরবিটালে প্রবেশ করে সে সব মৌলকে s-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির 1, 2 শ্রেণির এবং He হলো s-ব্লক মৌল । s-ব্লক মৌলের মোট সংখ্যা মোট ১৪ টি। এসব মৌলের সর্ববহিঃস্তরে s’ অথবা s± ইলেকট্রন বিন্যাস থাকে । যেমন –

(২) p-ব্লক মৌল :

2 He (2) = 1s2 Be(4) = 1s2 2s2 Mg(12) = [Ne] 10 3s 2 Ca ( 20 ) = [Ar] 18 4s 2 যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p-অরবিটালে প্রবেশ করে তাদেরকে p-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির 13, 14, 15, 16, 17 এবং 18 গ্রুপের He মৌল বাদে অবশিষ্ট মৌলসমূহ এ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। p-ব্লকে সর্বমোট 30 টি মৌল রয়েছে। এসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে p’ থেকে p’ পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেমন-

 

(৩) d-ব্লক মৌল :

যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d অরবিটালে প্রবেশ করে তাদের d-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির চতুর্থ পর্যায়ের স্ক্যানডিয়াম, Sc( 21 ) থেকে জিঙ্ক, Zn(30) এবং পঞ্চম পর্যায়ের ইট্রিয়াম, Y(39) থেকে ক্যাডমিয়াম,Cd ( 48) হলো d-ব্লক ,  মৌল। এছাড়া ষষ্ঠ পর্যায় ও সপ্তম পর্যায়ে d-ব্লক মৌল আছে। পর্যায় সারণির ‘3’ থেকে গ্রুপ 12 এর মৌলসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ শ্রেণিতে সর্বমোট 40টি মৌল আছে। এ ব্লকের মৌলের পরমাণুর d’ থেকে d” পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেমন—

 

d-ব্লক মৌলসমূহের বিশেষ বিশেষ ধর্মের কারণে এদেরকে অবস্থান্তর মৌল বলে। সেসব d-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নে d অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে অর্থাৎ d’ থেকে dº পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে সেসব মৌলকে অবস্থান্তর মৌল বলে। তবে সকল অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সকল d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। যেমন– Sc, Zn, Y, Cd, Zr, La, Ac ইত্যাদি d-ব্লক মৌল হলেও অবস্থান্তর মৌল নয়। কারণ এদের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d-অরবিটালে প্রবেশ করে। তাই এরা d-ব্লক মৌল ।

কিন্তু এদের স্থায়ী আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে আংশিক পূর্ণ d-অরবিটাল না থাকায় এরা অবস্থান্তর মৌল নয়। Sc, Zn, Y, Cd, Zr, La, Ac ইত্যাদির স্থায়ী আয়ন হচ্ছে যথাক্রমে Sc3+, Zn2+, Y+, Cd2+, Zr+, Lat, Act। এদের স্থায়ী আয়নগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায়, কোনো কোনো আয়নের d- অরবিটালে ইলেকট্রন থাকে না; আবার কোনো কোনো মৌলের স্থায়ী আয়নের d-অরবিটালটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে। তাই বলা যায়, সকল অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সকল d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। এসব মৌলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কতিপয় ধর্ম হলো (ক) এদের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা থাকে, (খ) এরা রঙিন যৌগ গঠন করে (গ) প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং (ঘ) জটিল যৌগ গঠন করে ।

(8) f-ব্লক মৌল :

যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি f-অরবিটালে প্রবেশ করে সেসব মৌলকে f-ব্লক মৌল বলে। ল্যান্থানাইড (Lanthanides) এবং অ্যাকটিনাইড (Actinides) সিরিজের মৌলসমূহ f-ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। পর্যায় সারণির ষষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম, La(57) থেকে পরবর্তী লুটেসিয়াম, Lu (71) পর্যন্ত ১৫টি এবং অ্যাক্টিনিয়াম, Ac(89) থেকে পরবর্তী লরেনসিয়াম, Lr(103) পর্যন্ত ১৫টি সহ সর্বমোট 30টি মৌল এ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। f-ব্লক মৌলসমূহকে পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে f-ব্লক মৌল হলো সেরিয়াম, Ce(58) হতে লুটেসিয়াম, Lu(71) এবং প্রোটেকটিনিয়াম, Pa(91) থেকে লরেনসিয়াম, Lr(103) পর্যন্ত মোট 27টি। এসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে f1 থেকে 114 পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেসব f-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নে f-অরবিটাল আংশিকভাবে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে অর্থাৎ f1 থেকে 13 পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে তাদেরকে আন্তঃঅবস্থান্তর মৌল (inner transition) বলে ।

 

 

 

আরও পড়ুন…

Exit mobile version