রাসায়নিক বিশ্লেষণ

রাসায়নিক বিশ্লেষণ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “ব্যবহারিক রসায়ন” ইউনিট ৯ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

রাসায়নিক বিশ্লেষণ

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অজানা লবণের (যৌগের) গুণগত ও পরিমাণগত দিক সম্পর্কে সম্যক জানা যায় তাকেই রাসায়নিক বিশ্লেষণ বলা হয়। রাসায়নিক বিশ্লেষণকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় । যথা-

(i) গুণগত বা আঙ্গিক বিশ্লেষণ (Qualitative analysis) এবং

(ii) পরিমাণগত বা মাত্রিক বিশ্লেষণ (Quantitative analysis)

আঙ্গিক ও গুণগত বিশ্লেষণের সাহায্যে লবণে কি কি মৌল বা মূলক উপস্থিত থাকে তা জানা যায় আর মাত্রিক বা পরিমাণগত বিশ্লেষণের সাহায্যে উপস্থিত মৌল বা মুলকের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। আঙ্গিক ও গুণগত বিশ্লেষণ আলোচনার পূর্বে চলুন আমরা অজৈব লবণ সম্পর্কে জেনে নিই।

অজৈব লবণ: লবণ একটি যৌগিক পদার্থ। এসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়ায় লবণ ও পানি উৎপন্ন হয় । কোন অজৈব এসিডের হাইড্রোজেন কোন ধাতু বা ধাতুর ন্যায় ক্রিয়াশীল মূলকের সাহায্যে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রতিস্থাপিত হলে লবণ উৎপন্ন হয়। যেমন,

এসিড ও ক্ষারের প্রশমন বিক্রিয়ায় এসিডের হাইড্রোজেন পরমাণু বা পরমাণুসমূহ সম্পুর্ণ বা আংশিক ভাবে ক্ষারকের ধাতু বা ধাতুর ন্যায় ক্রিয়াশীল মুলক (redical) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে লবণ উৎপন্ন করে। সুতরাং বলা যায় লবণের এক অংশ ক্ষারক হতে এবং অন্য অংশ এসিড হতে প্রাপ্ত। লবণের যে অংশ ক্ষারক হতে প্রাপ্ত তাকে ক্ষারকীয় মূলক (basic radical) এবং যে অংশ এসিড হতে প্রাপ্ত তাকে অম্লীয় মুলক বা এসিডিক মূলক (acidic radical) বলা হয়। যেমন-

 

আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, আজৈব লবণে দু’টি মূলক থাকে। একটি ক্ষারকীয় মূলক ও অপরটি অম্লীয় মূলক। ক্ষারকীয় মূলক ধনান্তক চার্জযুক্ত, অন্যদিকে অম্লীয় মূলক ঋনান্তক চার্জযুক্ত। ক্ষারকীয় মূলক বা ধনান্তক মূলক ক্যাটায়ন (Cation) এবং অম্লীয় মুলক বা ঋনান্তক মূলক অ্যানায়ন (anion) নামে পরিচিত। অজৈব লবণ প্রধানত ছয় প্রকার হাতে পারে। যথা-

 

(i) পূর্ণ সরল লবণ (Simple salt) : NaCl, KNO3, CaCO3 ইত্যাদি।

(ii) অম্লীয় বা আংশিক লবণ : Mg (HSO4)2, NaHCO3

(iii) ক্ষারকীয় লবণ : Na2CO3, CuSo4

(iv) দ্বি-লবণ (Double salt) : K2SO4. Al2(SO4)3.2H2O

(v) জটিল লবণ (Complex salt) : K4[Fe(CN)6]

(vi) মিশ্র লবণ : NaKSO 4

 

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMO2Dtgsw-p7NAw?hl=en-US&gl=US&ceid=US:en
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

(i) গুণগত বা আঙ্গিক বিশ্লেষণ (Qualitative analysis)

যে বিশ্লেষণের সাহায্যে একটি যৌগে বা লবণে উপস্থিত মূলক সম্পর্কে জানা যায় তাকে গুণগত বা আঙ্গিক বিশ্লেষণ বলে। অজৈব লবণ সনাক্ত করণের জন্য আঙ্গিক বিশ্লেষণ প্রণালী ব্যবহৃত হয়। আঙ্গিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি লবণে কি কি মূলক উপস্থিত আছে তা জানা যায় । আঙ্গিক বিশ্লেষণ প্রধানত: দু’টি অংশে বিভক্ত। যথা-

ক) শুষ্ক পরীক্ষা (Dry Test)

খ) সিক্ত পরীক্ষা (Wet Test)

 

ক) শুষ্ক পরীক্ষা (Dry Test) : অজানা নমুনা লবনকে লইয়া সরাসরি পরীক্ষা করাকে অর্থাৎ নমুনা লবনকে শুষ্ক অবস্থায় শুধু তাপ প্রয়োগ করে কিংবা বিকারকের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে সনাক্ত করার পদ্ধতিকে শুষ্ক পরীক্ষা বলে। শুষ্ক পরীক্ষার সাহায্যে লবণে উপস্থিত মূলকগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও এদের সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া বা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় না। স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে সিক্ত পরীক্ষার সাহায্য নিতে হয়। ক্ষারকীয় মুলকগুলোর যে সব শুষ্ক পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হচ্ছে (i) তাপ পরীক্ষা (Heat test), (ii) কাঠ কয়লা খন্ড পরীক্ষা (Charcoal block test) (iii) কার্বন বিজারণ ও কার্বন জারণ পরীক্ষা, (iv) কোবাল্ট নাইট্রেট পরীক্ষা (Cobalt nitrate test), (v) শিখা পরীক্ষা (Flame test) এবং (vi) বোরাক্সগুটি পরীক্ষা (Borax bead test)।

খ) সিক্ত পরীক্ষা (Wet Test): অজানা নমুনা লবনকে দ্রবণে নিয়ে পরীক্ষা করার পদ্ধতিকে সিক্ত পরীক্ষা বলে। সিক্ত পরীক্ষার সাহায্যে লবণে উপস্থিত মূলকগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া ও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়। আঙ্গিক বিশ্লেষণের জন্য সিক্ত পরীক্ষার শুরুতে অজনা নমুনা লবনের দ্রাব্যতা পরীক্ষা করা হয়।

(ii) পরিমাণগত বা মাত্রিক বিশ্লেষণ (Quantitative analysis)

যে রাসায়নিক বিশ্লেষনের সাহায্যে কোন মিশ্রনের মধ্যে কি পরিমাণে প্রতিটি উপাদান বিদ্যমান আছে, তাহা নির্ণয় করা যায় উহাকে মাত্রিক বিশ্লেষণ বলা হয়। মাত্রিক বা পরিমাণগত বিশ্লেষণের সাহায্যে কোন নমুনায় উপস্থিত মৌল বা মূলকের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। মাত্রিক বিশ্লেষণ প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

ক) আয়তনিক বিশ্লেষণ (Volumetric analysis )

খ) ভর বা ওজন মাত্রিক বিশ্লেষণ (Gravimetric analysis )

ক) আয়তনিক বিশ্লেষণ (Volumetric analysis ) যে মাত্রিক বিশ্লেষণে কোন অজ্ঞাত ঘনমাত্রার দ্রবণের নির্দিষ্ট আয়তনের সাথে জ্ঞাত ঘনমাত্রার একটি দ্রবণের বিক্রিয়া ঘটাইয়া বিক্রিয়া সমাপ্তির জন্য উভয় দ্রবণের ব্যবহৃত আয়তন থেকে অজ্ঞাত ঘনমাত্রার দ্রবণটিতে দ্রবীভূত পদার্থের পরিমাণ নির্ণয় করা হয় তাকে আয়তনিক বিশ্লেষণ বলে। শুদ্ধভাবে যে দ্রবণের ঘনমাত্রা (নরম্যালিটি) পূর্বাহে জানা থাকে তাকে প্রমাণ দ্রবন (Standard solution) বলা হয়। আয়তনিক বিশ্লেষণ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা- ১. প্রশমন বা অ্যাসিড-অ্যালকালি পদ্ধতি, ২. জারণ-বিজারণ পদ্ধতি ইত্যাদি।

খ) ভর বা ওজন মাত্রিক বিশ্লেষণ (Gravimetric analysis)  যে বিশ্লেষণে কোন মৌলিক পদার্থ বা উহার কোন নির্দিষ্ট যৌগ পৃথক করিয়া ওজন করা হয় উহাকে ভর বা ওজন মাত্রিক বিশ্লেষণ বলে।

 

আরও পড়ুন…

Leave a Comment