গে-লুস্যাকের সূত্র ও অ্যাভোগ্রেডোর সূত্র

গে-লুস্যাকের সূত্র ও অ্যাভোগ্রেডোর সূত্র আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “পদার্থের অবস্থা” ইউনিট ৪ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

গে-লুস্যাকের সূত্র ও অ্যাভোগ্রেডোর সূত্র

 

গে-লুস্যাকের গ্যাস আয়তন সূত্র (Gay Lussac’s Law of Gaseous Volume )

1808 সালে ফরাসি রসায়নবিদ গে-লুসাক সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন যে, দুই বা ততোধিক গ্যাসের রাসায়নিক সংযোগ সর্বদা তাদের আয়তনের সরল অনুপাতে ঘটে। তাঁর নামানুসারে এই সূত্রটিকে গে-লুসাকের গ্যাস আয়তন সূত্র বলে। সূত্রটি হলো বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ যখন পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে তখন—

১. বিক্রিয়ক গ্যাসসমূহের আয়তনের মধ্যে সর্বদা একটি সরল অনুপাত বজায় থাকে ।

২. উৎপাদ পদার্থ যদি গ্যাসীয় হয় তাহলে তার/তাদের আয়তনের সাথে বিক্রিয়ক গ্যাসসমূহের আয়তনের মধ্যেও একটি সরল অনুপাত বজায় থাকে । এক্ষেত্রে সকল গ্যাসের আয়তন একই তাপমাত্রা ও চাপে পরিমাপ করা হয়। যেমন- একই তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজেন ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন করে।

অ্যাভোগ্রেডোর সূত্র

বিক্রিয়ার সমীকরণ হতে দেখা যায়, 1 অণু হাইড্রোজেন 1 অণু ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে 2 অণু HCl গ্যাস উৎপন্ন করে । তাহলে 6.023 103 টি হাইড্রোজেন অণু 6.02 1023 টি ক্লোরিন অণুর সাথে বিক্রিয়া করে 2 × 6-02 × 103 টি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণু গঠন করে ।

অর্থাৎ 1 মোল হাইড্রোজেন গ্যাস 1 মোল ক্লোরিন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে 2 মোল হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন করে । অ্যাভোগেড্রোর সূত্রানুসারে, একই তাপমাত্রা ও চাপে সকল গ্যাসের মোলার আয়তন সমান এবং প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপে 22.4 L । সুতরাং প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপে 22.4 L হাইড্রোজেন গ্যাস 22.4 L ক্লোরিন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে 44.8 L হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। অতএব হাইড্রোজেন, ক্লোরিন ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের অনুপাত = 22.4 : 22.4 : 44-8 = 1 :12 যা একটি সরল অনুপাত ।

একইভাবে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং সেক্ষেত্রে একই তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসসমূহের আয়তনের অনুপাত 1:3 : 2 হচ্ছে একটি সরল অনুপাত ।

গে-লুস্যাকের চাপের সূত্র (Gay-Lussac’s Law of Pressure of Gases)

1802 খ্রিষ্টাব্দে গে-লুসাক নির্দিষ্ট ভরের স্থির আয়তনের উপর তাপমাত্রা ও চাপের সম্পর্কসূচক সূত্র প্রকাশ করেন। যা গে-লুসাকের চাপের সূত্র নামে পরিচিত। সূত্রটি হচ্ছে— “স্থির আয়তনে কোনো নির্দিষ্ট ভরবিশিষ্ট গ্যাসের চাপ ঐ গ্যাসের পরম (বা কেলভিন) তাপমাত্রার সমানুপাতিক।” স্থির আয়তনে (V) কোনো গ্যাসের T তাপমাত্রায় চাপ P হলে চাপের সূত্রানুসারে-

অ্যাভোগেড্রোর সূত্র (Avogadro’s Law)

১৮১১ সালে ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী অ্যাভোগেড্রো গ্যাসের আয়তন ও অণুর সংখ্যার মধ্যকার সম্পর্ক প্রকাশকারী যে সূত্র প্রদান করেন তাকে অ্যাভোগেড্রো সূত্র বলে। সূত্রটি হচ্ছে “স্থির তাপমাত্রা ও চাপে সমান আয়তনের সকল গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে।”

পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, স্থির তাপমাত্রা ও চাপে সকল গ্যাসের মোলার আয়তন সমান এবং প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপে (Standard Temperature and Pressure — STP ) যেকোনো গ্যাসের মোলার আয়তন 22.414 L। আবার SATP (Standard Ambient Temperature and Pressure) এ যেকোনো গ্যাসের মোলার আয়তন 24.789 L। এক্ষেত্রে 0°C বা 273 K তাপমাত্রা এবং 1 atm চাপকে STP বা প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপ বলে। অপরদিকে 25°C বা 298 K তাপমাত্রা এবং 1 atm চাপকে SATP বলে ।

স্থির তাপমাত্রা ও চাপে কোনো গ্যাসের মোল সংখ্যা বাড়লে তার আয়তনও বৃদ্ধি পায় এবং মোল সংখ্যা হ্রাস করলে আয়তনও হ্রাস পায়। অর্থাৎ “স্থির তাপমাত্রা ও চাপে কোনো গ্যাসের আয়তন তার মোল সংখ্যার সমানুপাতিক।”

সুতরাং কোনো গ্যাসের আয়তন V এবং মোল সংখ্যা n হলে অ্যাভোগেড্রোর সূত্রানুসারে, Voc n (চাপ ও তাপমাত্রা স্থির থাকলে) বা, V = Kn (K সমানুপাতিক ধ্রুবক)।

[একই তাপমাত্রা ও চাপে যেকোনো গ্যাসের 1 মোলে সমান সংখ্যক অণু থাকে এবং তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধিতে গ্যাসের অণুর সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না। কাজেই এসব গ্যাসকে শীতল করলে প্রথমে তরল ও পরে কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। কিন্তু অণুর সংখ্যা হ্রাস বা বৃদ্ধি না হওয়ায় কঠিন বা তরল বা গ্যাসীয় যেকোনো পদার্থের এক মোলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অণু থাকে। কোনো পদার্থের এক মোলে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অণু থাকে তাকে অ্যাভোগেড্রো সংখ্যা বলে ।

একে Na দ্বারা প্রকাশ করা হয় । অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যার পরীক্ষালব্ধ মান Na = 6-023 × 1023

মোলের ধারণা এবং অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা : কোনো পদার্থের আণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে তাকে এর গ্রাম আণবিক ভর বলে। অনুরূপভাবে, পারমাণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে তাকে গ্রাম পারমাণবিক ভর এবং আয়নিক ভরকে গ্রামে প্রকাশ করলে তাকে গ্রাম আয়নিক ভর বলে। এই গ্রাম আণবিক ভর বা গ্রাম পারমাণবিক ভর বা গ্রাম আয়নিক ভরকে মোল বলে। যেকোনো পদার্থের এক মোলের মধ্যে কণার সংখ্যা 6-023 × 1023 টি। এই সংখ্যাকে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা বলে। একে N দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMO2Dtgsw-p7NAw?hl=en-US&gl=US&ceid=US:en

 

 

আরও পড়ুন…

Leave a Comment