কৌটা জাতকরণ (দেশি ফল ও সবজির কৌটাজাতকরণ) আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “কর্মমুখী রসায়ন” ইউনিট ৭ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
কৌটা জাতকরণ (দেশি ফল ও সবজির কৌটাজাতকরণ)
কৌটাজাতকরণের মূলনীতি (Principles of Canning)
খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি উন্নতমানের পদ্ধতি হলো কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি। সঠিকভাবে খাদ্য কৌটাজাতকরণ করলে এবং এর ঢাকনা না খুললে খাদ্যের জীবাণু মরে যায় এবং নতুন কোনো জীবাণু খাদ্যে জন্মাতে পারে না। এর ফলে খাদ্যকে বহুদিন পর্যন্ত অর্থাৎ দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। খাদ্য কৌটাজাত করণের ফলে বিভিন্ন মৌসুমের ফল, শাকসবজি, মাছ, মাংস প্রভৃতি বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে খাদ্যকে উপযুক্ত প্রিজারভেটিভস যোগ করে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কৌটার মধ্যে নেওয়া হয়।
কৌটাকে বায়ুরোধী করার জন্য একে ফুটন্ত পানি বা বাষ্পের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হয়। একে একজসটিং বলে। এরপর কৌটার মুখ ঢাকনা দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে খাদ্যের মুক্ত পানির উপস্থিতি বন্ধ হয় এবং নতুন জীবাণু জন্মাতে ও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। অতঃপর খাদ্যদ্রব্যসহ টিনের কৌটাটি উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটিয়ে জীবাণু মুক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিকে স্টেরিলাইজেশন বলা হয়। অতঃপর কৌটাকে ঠাণ্ডা করে কোম্পানির লেবেল লাগিয়ে সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ করা হয়। লেবেলের উপর সংরক্ষণের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি লেখা হয় ।
কৌটাজাতকরণ প্রণালি (Process of Canning)
খাদ্য সংরক্ষণের একটি উন্নত এবং আধুনিক পদ্ধতি হচ্ছে খাদ্য কৌটাজাতকরণ। এ পদ্ধতিতে খাদ্যের গুণগত মানকে সঠিকভাবে ধরে রাখা সম্ভব। এজন্য খাদ্যদ্রব্যকে জীবাণুমুক্ত করে কৌটার মধ্যে প্রিজারভেটিভসহ সংরক্ষণ করা হয়। কৌটার মধ্যে খাদ্যদ্রব্য জীবাণুমুক্ত থাকায় দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। নিম্নে খাদ্য কৌটাজাতকরণ প্রণালির ধাপগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ : উন্নত এবং উৎকৃষ্ট মানের খাদ্যবস্তুর উপাদানকেই কৌটাজাতকরণের জন্য নির্বাচন করতে হয়। উন্নতমানের উপাদান সংরক্ষণ করলে খাদ্যমান ভালো পাওয়া যায় এবং এর স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হয়। ২. বাছাইকরণ : সাধারণত যেসব খাদ্যদ্রব্যের উপাদানের আকার, আকৃতি, বর্ণ, সুন্দর, আঘাতবিহীন, জীবাণুমুক্ত ও টাটকা তাদেরকে কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য বাছাই করা হয়। কোনোরকম থেঁতলানো, পচা দাগ বা নরম খাদ্যবস্তু প্যাকেজিং করা যাবে না। মাছ ও মাংসের জন্য উৎকৃষ্ট মানেরটাই নির্বাচন করতে হবে। জীবাণু ও কীট পতঙ্গের দ্বারা দূষিত খাদ্যবস্তু কৌটাজাতকরণ করা যাবে না।
৩. ওজন নেওয়া : কৌটাজাতকরণের জন্য প্যাকেটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী খাদ্যবস্তুর ওজন নেওয়া প্রয়োজন ।
৪. ধৌতকরণ : প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে খাদ্যবস্তু পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া হয়। এক্ষেত্রে পানিতে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে অথবা স্প্রে পদ্ধতিতে ধুয়ে নেওয়া হয় ।
৫. খোসা ছাড়ানো ও টুকরাকরণ : শাকসবজি অপ্রয়োজনীয় অংশ দূর করা হয়। ফলের খোসা এবং বীজ থাকলে তা অপসারণ 1 1 করা হয়। মাছ ও মাংসের চর্বিজাতীয় অংশ এবং অভক্ষণীয় অংশ অপসারণ করা হয়। তারপর টুকরায় কাটা হয়। – 4″ 2″ টুকরাগুলো লম্বাও হতে পারে আবার চাকতির মতো গোলাকারও হতে পারে ।
৬. ব্রাঞ্চিং করা : ফুটন্ত পানিতে বা সদ্য উৎপাদিত বাষ্পে প্রস্তুতকৃত টুকরাগুলোকে 5-10 মিনিট তাপ প্রয়োগ করা হয়। বেশি পাকা ফল বা সবজির ক্ষেত্রে ব্রাঞ্চিং বর্জন করা হয় । এতে খাদ্য সামগ্রী পরিষ্কার হয় এবং খাদ্য সামগ্রীর আয়তন কমে যাওয়ায় ভালোভাবে কৌটাজাত করা যায়। অনেক সময় অসহনীয় ও অগ্রহণযোগ্য ঘ্রাণও দূর হয়। কোনো কোনো শাকসবজির গায়ের পিচ্ছিল পদার্থসমূহ দূর করে। কিছু কিছু অণুজীবকে মেরে ফেলে এবং খাদ্যস্থিত এনজাইমকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ।
৭. কৌটায় ভর্তিকরণ : প্রস্তুতকৃত টুকরাগুলো পাত্রে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে পরস্পরের মধ্যে পরিমাণমতো ফাঁকা জায়গা থাকে এবং উপরিভাগেও কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে । কারণ পরবর্তীতে প্রিজারভেটিভ যেন সর্বত্র সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে।
৮. প্রিজারভেটিভ যোগকরণ : খাদ্যের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনমতো অনুমোদিত মাত্রায় বিভিন্ন খাদ্য প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয় । সাধারণ ফলের ক্ষেত্রে চিনি, ভিনেগার এবং শাকসবজির ক্ষেত্রে লবণের দ্রবণ যোগ করা হয়।
৯. একজসটিং : এই ধাপে পাত্রে সিলিং এর আগে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে পাত্রের বায়ু দূর হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে পাত্রে মরিচা পড়ে না এবং বায়বীয় অণুজীব দ্বারা খাদ্য দূষিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না ।
১০. সিলিং : একজসটিং এর সঙ্গে সঙ্গে পাত্রের উপরে ঢাকনা লাগিয়ে তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ বায়ুরোধী করে সিল করা হয় ।
১১. স্টেরিলাইজিং : সিলিং এর পর স্টেরিলাইজিং করা হয়। যেসব খাদ্য এসিডিক সেক্ষেত্রে 90–100°C তাপমাত্রায় প্রায় 30 মিনিট তাপ প্রয়োগ করা হয়। যেসব খাদ্যে এসিড নেই অথবা খুব কম আছে সেক্ষেত্রে 121°C তাপমাত্রায় 1.5 থেকে 2 ঘণ্টা ধরে তাপ প্রয়োগ করা হয়। কারণ 121°C তাপমাত্রায় জীবাণুর স্পোর বা কেলাস কাঠামো ভেঙে যায়। এতে খাদ্য সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত হয় এবং কিছুটা রান্নার কাজও হয়। যে ভৌত পদ্ধতিতে খাদ্য সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত হয় তাকে স্টেরিলাইজেশন বলে।
১২. ঠাণ্ডা করা : যে সকল খাদ্য রিটটিং করা হয় তাদের ক্ষেত্রে রিটটিং এর পর ঠাণ্ডা করা হয়। ১৩. লেবেল লাগানো : সবশেষে পাত্রের গায়ে খাদ্যের নাম, তৈরির তারিখ, সর্বোচ্চ কতদিন ব্যবহার উপযোগী, কোম্পানির নাম, সংরক্ষণ নিয়ম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ লেবেল লাগানো হয়।
১৪. সংরক্ষণ : উপর্যুক্ত নিয়মাবলি যথাযথভাবে পালন করে খাদ্যদ্রব্য কৌটাজাতকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। ফলে খাদ্যদ্রব্যের গুণগতমান বজায় থাকে এবং দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হয়।
দেশি ফলের কৌটাজাতকরণ প্রবাহ চিত্র :
আনারস কৌটাজাতকরণ (Canning of Pineapple) :
আনারস একটি মৌসুমি ফল। আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে আনারস উৎপাদিত হলেও পচনশীল হওয়ায় আনারসের অপচয় প্রচুর পরিমাণে হয়। কৌটাজাতকরণ পদ্ধতিতে আনারসের সংরক্ষণ করে অপচয় রোধ করা যায়। নিচে আনারসের কৌটাজাতকরণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো :
প্রথমে সম্পূর্ণরূপে শুষ্ক ও পুরোপুরি পাকা আনারস নির্বাচন করতে হয়। অতঃপর আনারসের যে সমস্ত অংশ খাবার উপযোগী নয় সেগুলোকে অপসারণ করে স্লাইডার দিয়ে কাঙ্ক্ষিত আকারে পরিণত করে স্লাইস (পাতলা ফালি) করে নিতে হয়। স্লাইসের আকারের উপর ভিত্তি করে বাছাই করা হয়। স্লাইসগুলোকে উপযুক্ত মাত্রার কৌটায় ভর্তি করে তাতে 35-40% মাত্রার চিনির গরম দ্রবণ এমনভাবে যোগ করা হয় যেন স্লাইসগুলো চিনির দ্রবণে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকে।
এখানে চিনির দ্রবণ প্রিজারভেটিভস হিসেবে কাজ করে। অতঃপর কৌটাকে ফুটন্ত পানিতে একজসটিং করে কৌটার মুখে সিল করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় কৌটাকে 25–30 মিনিট ধরে ফুটন্ত পানিতে স্টেরিলাইজেশন করা হয়। অতঃপর কৌটাকে ঠাণ্ডা করে লেবেল লাগিয়ে শুষ্ক, ঠাণ্ডা ও সূর্যের আলোবিহীন স্থানে গুদামজাত করা হয়। লেবেলে খাদ্যের নাম, উৎপাদন, তারিখ ও মেয়াদ উল্লেখ করতে হয়।
আম কৌটাজাতকরণ (Canning of Mango) :
আম একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল। এটি মৌসুমি ফল হওয়ায় কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়া দ্বারা সংরক্ষণ করে সারা বছর একে খাবার উপযোগী করে রাখা যায় ।
পদ্ধতি : বেশি পাকা অথবা বেশি কাঁচা নয় এমন পরিপক্ব আমকে বাছাই করতে হবে । বাছাইকৃত আমকে উত্তমরূপে পানি দ্বারা ধৌত করার পর বাইরের আবরণটি অপসারণ করতে হবে। ধারালো ছুরি দ্বারা সুন্দর করে টুকরা টুকরা করে কেটে কাচপাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এর ভিতরের আটি ফেলে দিতে হবে। যে কৌটায় আম সংরক্ষণ করতে হবে সেটিকে পরিষ্কার করার পর গরম পানি দ্বারা কয়েকবার ধৌত করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
এরপর আমের টুকরাগুলোকে কৌটার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এতে 45% চিনির এবং 0.2% সাইট্রিক এসিডের দ্রবণ যোগ করে ডুবিয়ে রাখতে হবে। চিনি এবং সাইট্রিক এসিডের দ্রবণ প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। এ অবস্থায় কৌটার মুখ সিল করে দিতে হবে। এরপর কৌটার গায়ে লেবেল লাগাতে হবে। এ লেবেলের মধ্যে উৎপাদনের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। কৌটাটিকে শুষ্ক এবং ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে।
কাঁঠাল কৌটাজাতকরণ (Canning of Jackfruit) :
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এ মৌসুমি ফলটি বেশ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এ ফলটি পচনশীল হওয়ায় পেকে গেলে বেশিক্ষণ মুক্ত অবস্থায় রাখা যায় না ।
পদ্ধতি : খুব বেশি অথবা খুব কম পাকা নয় এমন বড় কোয়াযুক্ত কাঁঠালকে কৌটাজাতকরণের জন্য বাছাই করা হয়। কাঁঠালটিকে ফেঁড়ে এর অভ্যন্তর ভাগের উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের বড় বড় রসাল কোয়াগুলোকে বের করে নেওয়া হয়। প্রতিটি কোয়া থেকে বীজ বের করে নিয়ে পরিষ্কার করা হয়। কৌটাগুলোকে ফুটন্ত পানি দ্বারা ধৌত করার পর রোদে শুকিয়ে নিতে হয়।
কৌটার মধ্যে 40% চিনির দ্রবণ এবং 0.2% সাইট্রিক এসিড দ্রবণ মিশ্রিত করে তাতে পরিষ্কার করা কোয়াগুলোকে এমনভাবে প্রবেশ করানো হয় যেন কোয়াগুলো দ্রবণের মধ্যে ডুবানো থাকে। চিনি এবং সাইট্রিক এসিডের দ্রবণ প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। ফুটন্ত পানিতে কৌটাকে একজসটিং করে সিল করা হয়। অতঃপর সিল করা অবস্থায় স্টেরিলাইজ করে ঠাণ্ডা করা হয় এবং লেবেল লাগিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
কচি ভুট্টা কৌটাজাতকরণ (Canning of Baby Corn) :
ভুট্টা একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য। পোড়া ভুট্টা খেতে খুব মজা লাগে। তা ছাড়া ভুট্টার খই লবণ ও গুঁড়া মরিচ দিয়ে মেখে খেতে বেশ ভালো লাগে ।
পদ্ধতি : ভুট্টার খেত থেকে সুন্দর এবং সতেজ দানাযুক্ত কচি ভুট্টা সংগ্রহ করে প্রথমে খোসামুক্ত করা হয়। অতঃপর ভুট্টার দানাগুলোকে পৃথক করে নেওয়া হয় । একটি কড়াই এর মধ্যে ভুট্টার দানাগুলোকে নিয়ে ফুটন্ত পানি যোগ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি 4 কাপ ভুট্টার দানার জন্য 1 কাপ ফুটন্ত পানি নেওয়া হয়। প্রায় 5-7 মিনিট যাবৎ ভুট্টার দানাগুলোকে ফুটন্ত পানিতে উত্তপ্ত করা হয়। ঠাঞ্জ করার পর ভুট্টার দানাগুলোকে আলাদা করে পরিষ্কার করা কৌটার মধ্যে প্রবেশ করানো হয়।
কৌটার উপরে প্রায় 1 ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হয় । ভুট্টার দানাগুলোকে কৌটার মধ্যে রেখে এতে ফুটন্ত পানি যোগ করা হয়। ভুট্টার দানাগুলো পানির নিচে ডুবানো থাকে। কৌটার দুই- তৃতীয়াংশ পরিমাণ গরম পানির মধ্যে রেখে উত্তপ্ত করলে ভিতরের সমস্ত বায়ু বের হয়ে যায় । কৌটার মুখে একটি ক্যাপ লাগানো হয় এবং ঢাকনা দ্বারা সিল করা হয়।
এবার একটি প্রেসার ক্যানারের মধ্যে সিল করা কৌটাকে রাখা হয়। প্রেসার ক্যানারের মধ্যে 2-3 ইঞ্চি উচ্চতা পর্যন্ত গরম পানি যোগ করে কৌটায় তাপ দেওয়া হয়। তাপ প্রয়োগে প্রেসার ক্যানারের ভিতরের চাপ বাড়তে থাকে। প্রেসার ক্যানারের ভিতরের চাপ প্রায় 10 পাউন্ডে পৌঁছালে স্টপ ওয়াচ এর সাহায্যে সময় গণনা শুরু করতে হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা তাপ দেওয়া হয়। তবে ভুট্টার পরিমাণ বেশি হলে তাপ বেশি সময় ধরে দিতে হবে ।
দুই কাপ ভুট্টার জন্য যেখানে এক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন, চার কাপ ভুট্টার জন্য সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা এবং আট কাপ ভুট্টার জন্য প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ধরে তাপ দেওয়া প্রয়োজন হয়। তাপ দেওয়া শেষে প্রেসার ক্যানার কিছুক্ষণ রেস্টে রাখতে হয়। প্রেসারের ক্যানারের চাপ জিরো হয়ে গেলে ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এরপর প্রেসার ক্যানারের ঢাকনা খুলে কৌটা বের করে লেবেল করে শুষ্ক এবং ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করা হয় ।
সবজির কৌটাজাতকরণ (Canning of Vegetables) :
সবজির কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়াটি ফল এর মতো নয়। সবজির মধ্যে ফলের তুলনায় সুগার এবং এসিড পরিমাণে কম থাকে কিন্তু স্টার্চ ও সেলুলোজ এর পরিমাণ বেশি থাকে ।
সবুজ মটরশুঁটি : ভালো মানের মটরশুঁটির মধ্যে আর্দ্রতা 74–81%, অ্যালকোহলে অদ্রবণীয় কঠিন পদার্থ 13–14.5% এবং খনিজ পদার্থ 4–5% বিদ্যমান ।
পদ্ধতি : সবুজ মটরশুঁটি সংগ্রহ করে এর খোসা অপসারণ করে পরিপক্ব দানাগুলো নিতে হয়। ভালো করে ধৌত করে 80°C-90°C তাপমাত্রায় গরম পানিতে 5-7 মিনিট ধরে ব্রাঞ্চিং করা হয়। ঠাণ্ডা করার পর মটর দানাগুলোকে চালুনির উপর কিছুক্ষণ রাখতে হয় ।
পানিমুক্ত হয়ে গেলে মটর দানাগুলোকে প্রস্তত করা সংরক্ষণকারী বেন্ট কৌটার মধ্যে নিয়ে তাতে 2.5% চিনির দ্রবণ এবং 1.5% খাদ্য লবণের দ্রবণ যোগ করা হয়। দ্রবণের মধ্যে মটর দানাগুলো ডুবানো থাকে এবং কৌটার উপরিভাগের কিছু অংশ ফাঁকা থাকে। কৌটার মুখ সিল করার পর প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ফুটন্ত পানিতে রাখতে হয়। অতঃপর ঠাণ্ডা করে কৌটাকে লেবেলিং করে শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করতে হয় ।
আরও পড়ুন…