ল্যাবরেটরি নিরাপত্তা সামগ্রী ও ব্যবহার বিধি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “ল্যাবরেটরির নিরাপদ ব্যবহার” ইউনিট ৮ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
ল্যাবরেটরি নিরাপত্তা সামগ্রী ও ব্যবহার বিধি
ল্যাবরেটরি নিরাপত্তা সামগ্রী ও ব্যবহার বিধি (Laboratory safety tools and its safe use)
ল্যাবরেটরিতে কাজ করবার সময় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন— কাপড়ে বা শরীরে এসিড লাগা, মুখমণ্ডলে বা চোখে এসিড পড়তে পারে, আগুনে পুড়ে যাওয়া, কাচের পাত্র ভেঙে কেটে যাওয়া, পরীক্ষানলে তাপ দেওয়ার সময় জাম্প করে রাসায়নিক দ্রব্য গায়ে বা চোখে মুখে পড়া, গবেষণাগারে আগুন লেগে যাওয়া ইত্যাদি। এ জাতীয় দুর্ঘটনা ঘটলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে নিতে হবে :
১) প্রথমত এসিড বা ক্ষার পড়লে সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থান সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। চোখে মুখে পড়লে প্রচুর পানি দিয়ে ধুতে হবে ।
(২) কোনো স্থান কেটে গেলে সেই অংশ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে শুকনা তুলা বা কাপড় দিয়ে মুছে এন্টিসেপটিক জাতীয় কিছু লাগাতে হবে। প্রয়োজনে ব্যান্ড এইড লাগানো যেতে পারে।
(৩) ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত গ্যাসের ধোঁয়ায় (যেমন- HCl, H2S ইত্যাদি) শ্বাসকষ্ট বা অস্বস্তি বোধ করলে উন্মুক্ত স্থানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে হবে অথবা ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) কোনো কারণে এসিড বা ক্ষার মুখের মধ্য দিয়ে পেটে গেলে প্রচুর পানি পান করাতে হবে। লেবুর রসও পান করানো যায় ।
(৫) কেবল এসিড পেটে গেলে MgCO3 চুনের পানির সাথে মিশ্রিত করে পান করালে আক্রান্ত ব্যক্তি কিছুটা স্বস্তি বোধ করবে। উল্লিখিত কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষককে জানাতে হবে এবং এর পর পরই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে ।
(৬) পরীক্ষাগারে আগুন লেগে গেলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে এবং এ যন্ত্র ল্যাবরেটরির মধ্যে দেয়ালে বা ল্যাবরেটরির বাইরের দেয়ালে রক্ষিত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে ছাত্র-শিক্ষক, গবেষণাগার পরিচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পূর্বেই করতে হবে। আগুন বেশি হলে দমকল বাহিনীকে খবর দিতে হবে।
(৭) অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কয়েক ধরনের রাখা উচিত। যেমন-
(ক) জ্বলনশীল ধাতুর (Mg, Ti, Na, Li, K) মাধ্যমে আগুন লাগলে ।
(খ) জ্বলনশীল তরল, তেল, পেইন্ট বা থিনার ইত্যাদিতে আগুন লাগলে ।
(গ) জ্বলনশীল কাঠ, কাপড়, কাগজ, রবার, প্লাস্টিক ইত্যাদিতে আগুন লাগলে ।
এছাড়া ত্বক বা দেহকে আগুন হতে বাঁচানোর জন্য ফায়ার কম্বলও ব্যবহার করা যেতে পারে ।
প্রাথমিক চিকিৎসা ও ফার্স্ট এইড ব• ব্যবহার বিধি (First Aid and Use of First Aid Box )
পরীক্ষাগারে ব্যবহারিক ক্লাস করার সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। ল্যাবরেটরিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য এবং বিভিন্ন কাচের যন্ত্রপাতি হতে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা ঘটার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার আগেই ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের জন্য তাৎক্ষণিক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে ।

ল্যাবরেটরির জন্য ফার্স্ট এইড বক্সে (প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স) নিম্নলিখিত দ্রব্যগুলো থাকা আবশ্যকীয় :
(১) শুকনা তুলা ও ব্যান্ডেজ, কিছু ব্যান্ড এইড, ক্রসটেপ।
(২) এন্টিসেপটিক জাতীয়, যেমন- স্যাভলন বা ডেটল, টিংচার আয়োডিন।
(৩) দুই তিন ধরনের ফোরসেফ।
(৪) ক্ষত পরিষ্কার করার জন্য অ্যালকোহল বা এ জাতীয় অন্য কোনো পরিষ্কারক।
(৫) ছোট কাঁচি এবং চাকু ।
(৬) ইনহেলার (inhaler)।
(৭) ব্যথা ও জ্বর উপশম জাতীয় ঔষধ, যেমন- প্যারাসিটামল, এসপিরিন ইত্যাদি।
(৮) পোভিডোন-আয়োডিন দ্রবণ (Povidone iodine Solution)।
(৯) অ্যান্টিবায়োটিক পাউডার বা ক্রিম, যেমন- নেবানল পাউডার বা ক্রিম ।
(১০) বার্নল (Burnol), বোরিক এসিড, ভেসলিন ইত্যাদি ।

ব্যবহার বিধি
১) কাচে বা অন্য কিছুতে হাত বা পা কেটে গেলে ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার পানি বা অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে ব্যান্ড এইড লাগানো যায় অথবা স্যাভলন দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে। ক্ষত বেশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক পাউডার বা ক্রিম দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
২) ক্ষতস্থানে কাচের টুকরা ঢুকে গেলে তা ফোরসেফ দিয়ে বের করে এনে পরিষ্কার করে মুছে অ্যান্টিবায়োটিক পাউডার বা ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
৩) কোনো স্থান পুড়ে গেলে অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করে পিকরিক এসিড দ্রবণ ব্যবহার করা যায় অথবা বার্নল লাগানো যায়। বর্তমানে গরম পানিতে পুড়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধৌত করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয় ।
৪) সামান্য কেটে গেলে হেক্সাসোল বা পোভিডোন-আয়োডিন দ্রবণের সাহায্যে পরিষ্কার করে ব্যান্ড এইড লাগিয়ে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন…