ক্ষারকীয় মূলকের সিক্ত পরীক্ষা

ক্ষারকীয় মূলকের সিক্ত পরীক্ষা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর  “ব্যবহারিক রসায়ন” ইউনিট ৯ এর অন্তর্ভুক্ত।

 

ক্ষারকীয় মূলকের সিক্ত পরীক্ষা

 

ক্ষারকীয় মূলকের সিক্ত পরীক্ষা

আঙ্গিক বিশ্লেষণের জন্য নমুনা লবণের সিক্ত পরীক্ষার শুরুতে লবণের দ্রাব্যতা পরীক্ষা করা হয়। দ্রাব্যতা পরীক্ষা থেকে লবণে উপস্থিত মূলক সম্পর্কে খানিকটা ধারণা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন দ্রাবকে লবণের দ্রাব্যতা পরীক্ষা ঃ

১) পানি: একটি পরিষ্কার টেস্টটিউব অল্প পরিমাণ (0.01-0.02 g) নমুনা লবণ নিয়ে এতে 4-5ml পাতিত পানি যোগ করে ভালভাবে ঝাঁকাতে হয়। যদি এতে নমুনা লবণ দ্রবীভূত না হয় তবে তাপ দিয়ে পুনরায় ভালমত ঝাঁকাতে হয়। এর পরও নমুনা লবণ পানিতে দ্রবীভূত না হলে বুঝতে হবে নমুনা লবণটি পানিতে অদ্রবনীয়। নিচের সারণিতে পানিতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় কিছু নমুনা লবণের উদাহরণ দেয়া হলো।

 

২) লঘু HCI: পানিতে নমুনা লবণ অদ্রবণীয় হলেই কেবল লবণের দ্রাব্যতা পরীক্ষার জন্য HCI ব্যবহার করা হয়। একটি পরিষ্কার টেস্টটিউবে অল্প পরিমাণ (3-4ml) লঘু HCI নিয়ে এতে সামান্য পরিমাণ (0.01-0.02 g) নমুনা লবণ যোগ করে ভালভাবে ঝাঁকাতে হয়। এতে লবণটি দ্রবীভূত না হলে তাপ প্রয়োগ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, কয়েকটি কার্বনেট যেমন ZnCO3, CaCO3 FeCO,ও CuCO, পানিতে অদ্রবণীয় হলেও লঘু HCI এ দ্রবণীয়। এসব লবণ লঘু HCI এ দ্রবীভূত হওয়ার সময় বুদবুদ আকারে CO, গ্যাস তৈরি করে যা লবণটিতে কার্বনেট মূলকের ( CO;2) উপস্থিতি নিশ্চিত করে।

মজুদ দ্রবণ

প্রস্তুতি সিক্ত পরীক্ষার সাহায্যে ক্ষারকীয় ও অম্লীয় মূলকের বিশ্লেষণের জন্য প্রথমেই নমুনা লবণের মজুদ দ্রবণ প্রস্তুত করতে হয়। এ জন্য ০.৫-১.০ গ্রাম লবণের সাথে উপযুক্ত দ্রাবক মিলিয়ে, দ্রবণ প্রস্তুত করা হয়। প্রয়োজনে উত্তপ্ত করে দ্রবণ প্রস্তুত করতে হয়। এ জন্য নিচের ক্রম অনুসারে অগ্রসর হতে হয়। এর যে কোন ধাপে লবণ দ্রবীভূত হলে আর পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে হয় না।

ক্ষারকীয় মূলকের শ্রেণী বিভাগ

নমুনা লবণের মজুদ দ্রবণ থেকে ক্ষারকীয় মূলক সনাক্তকরার জন্য ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হতে হয়। সাধারণত: নিম্নলিখিত ক্ষারকীয় মূলকের শ্রেণী বিভাগ করা হয়।

মজুদ নমুনা লবণের দ্রবণে একটি ক্ষারকীয় মূলক থাকলেও মূলকটিকে সনাক্ত করার জন্য প্রতিটি ক্ষারকীয় মূলকের আলাদা আলাদা ভাবে পরীক্ষা করা বেশ কঠিন। এ জন্য দ্রুত বিশ্লেষণের সুবিধার জন্য মুলকগুলোকে পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। এই শ্ৰেণী বিভাগের জন্য বিভিন্ন গ্রুপ বিকারক ব্যবহার করতে হয়। নিচের সারণিতে এই শ্রেণী বিভাগ দেখানো হলো:

 

সারণী- ৯.২ ক্ষারকীয় মুলকের শ্রেণী বা গ্রুপ বিভক্তিকরণ

(প্রথম বন্ধনীর ভেতরের মূলকগুলো আমাদের পাঠ্যসূচীতে নেই)

ক্ষারকীয় মুলকের শ্রেণীর বা গ্রুপ বিভক্তিকরণ মুলত দ্রাব্যতা গুণফল (Solubility product) মূলনীতির ভিত্তিতে করা হয়। বিশ্লেষণের এই গ্রুপ ও পর্যায়সারণীর গ্রুপ, এই দুই গ্রুপ এক নয়, তা স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন । প্রতিটি লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণের দু’টো আয়ন, ধনাত্নক আয়ন ও ঋনাত্নক আয়ন, এদের ঘনমাত্রার গুণফলের একটি সুনির্দিষ্ট মান থাকে।

এই নির্দিষ্ট মান বা ধ্রুবককেই উক্ত লবণের দ্রাব্যতা গুণফল বলা হয়। কোন লবণের দ্রবণে যখনই আয়নিক গুণফল (লবণের দ্রবণে আয়নদ্বয়ের ঘনমাত্রার গুণফল) দ্রাব্যতা গুণফলকে অতিক্রম করে, তখনই দ্রবণ থেকে অধঃক্ষিপ্ত হয় । গ্রুপ I এ Pb2+, Ag+ ও Hg2+ এই তিনটি মূলক আছে। এদের দ্রবণে লঘু HCl যোগ করলে এই সব ধাতুর ক্লোরাইড উৎপন্ন হয় যাদের আয়নিক গুণফল সহজেই দ্রাব্যতা গুণফলকে ছাড়িয়ে যায়- ফলে এই তিনটি ধাতব ক্লোরাইড সহজেই অধঃক্ষিপ্ত হয়। এই তিনটি ক্লোরাইডের মধ্যে PbCl এর দ্রাব্যতা গুণফল অনেক বেশী (2.4 ×10-4 যেখানে AgCl এর দ্রাব্যতা গুণফল 1.5×10-10)।

একারণে Pb2+ লঘু হাইড্রোক্লোরিকের সাহায্যে আংশিক ভাবে অধঃক্ষিপ্ত হয়। লবণ থেকে অবশিষ্ট Pb2+ গ্রুপ II বিকারকের সাহায্যে অধ:ক্ষিপ্ত করা হয়। এই তিনটি মূলক ছাড়া অন্যান্য ক্ষারকীয় মূলক সহযোগে গঠিত ক্লোরাইডসমূহের দ্রাব্যতা গুণফল অনেক বেশী বলে এগুলো লঘু HCl এর সাহায্যে অধঃক্ষিপ্ত করা যায়না ।

 

https://news.google.com/publications/CAAqBwgKMO2Dtgsw-p7NAw?hl=en-US&gl=US&ceid=US:en
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

বিভিন্ন ক্ষারকীয় মূলকের ধারাবাহিক বিশ্লেষণ

বিভিন্ন ক্ষারকীয় মূলকের ধারাবাহিক বিশ্লেষণের জন্য ৯.২ সারণি অনুসারে কাজ করতে হয়। লবণের মজুদ দ্রবণ থেকে ধারাবাহিক বিশ্লেষণের সাহায্যে প্রথমে বিভিন্ন গ্রুপ বিকারকের সাহায্যে ক্ষারকীয় মূলকটিকে গ্রুপ অধ:ক্ষেপ হিসেবে পৃথক করা হয়। পরে বিভিন্ন পরীক্ষার সাহায্যে মূলকটিকে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা হয় ।

গ্রুপ II মূলক শনাক্তকরণ

গ্রুপ II বিকারক লঘু HCl ও H2S (বা থায়ো অ্যাসিট্যামাইড) যোগ করার পর কালো বর্ণের অধঃক্ষেপ পাওয়া গেলে Pb2+ বা Cu2+ মূলক উপস্থিত থাকতে পারে । গ্রুপ II এর কালো বর্ণের অধঃক্ষেপের সাথে লঘু HNO3 যোগ করে ফুটিয়ে অধঃক্ষেপ দ্রবীভূত করুন। দ্রবণ নিয়ে পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করে Cu2+ মূলকের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।

Cu2+ মূলকের শিখা পরীক্ষা: গাঢ় HCI সিক্ত ‘প্লাটিনাম তার’ বা দেয়াশলাই কাঠির মাথায় সামান্য লবণ (গ্রুপ II এ প্রাপ্ত কালো অধ:ক্ষেপ বা পরীক্ষণীয় লবণ) নিয়ে জারণ শিখার পোড়ান। লবণটি উদ্বায়ী ধাতব ক্লোরাইডে পরিণত ও শিখায় বিভিন্ন রঙ সৃষ্টি হয়।

গ্রুপ III A মূলক Fe2+ এবং Fe3+ সনাক্তকরণ

গ্রুপ III A হতে প্রাপ্ত রঙীন অধ:ক্ষেপের সাথে NaOH দ্রবণ ও H2O2 দ্রবণ যোগ করে ফুটিয়ে নিন। NaOH দ্রবণ ও H2O2 দ্রবণ সহযোগে উত্তপ্ত করার পর অধঃক্ষেপ দ্রবীভূত না হলে অধ:ক্ষেপে HCl এ দ্রবীভূত করে নিচে বর্ণিত পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করে Fe2+ মূলকের উপস্থিতি নির্ণয় করুন।

Fe2+ এবং Fe3+ মূলকের পার্থক্য নির্ণয়

ধারাবাহিক বিশ্লেষণে গ্রুপ III মূলকের সনাক্তকরণ পরীক্ষায় পরিস্রুত দ্রবণের সাথে গাঢ় HNO3 যোগ করে ফুটানো হয়। ফলে কোন ফেরাস লবণ উপস্থিত থাকলে তা জারিত হয়ে ফেরিক লবণে পরিণত হয়। জারিত না করলে ফেরাস লবণ উপস্থিত থাকলে NH4OH দ্রবণ যোগ করলে অধ:ক্ষেপন সম্পূর্ণ হয় না। কিন্তু জারিত করার পর অধ:ক্ষেপন দ্রবণ ও উপরে বর্ণিত পরীক্ষার সাহায্যে Fe3+ মূলক সনাক্ত করলে এই Fe3+ মুলক মূল লবণে উপস্থিত ছিল কিনা তা সঠিক ভাবে বলা যায় না। এ জন্যই Fe সনাক্ত করার পর পরীক্ষণীয় লবণে Fe কোন জারন অবস্থায় অর্থাৎ Fe2+ বা Fe3+ অবস্থায় রয়েছে তা জানার জন্য নিম্ন লিখিত পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করুন।

গ্রুপ IIIB মূলক Zn2+ সনাক্তকরণ পরীক্ষা

গ্রুপ IIIB এর প্রাপ্ত অধঃক্ষেপ সাদা হলে তা ZnS এর অধঃক্ষেপ। সাদা অধঃক্ষেপ পাওয়া গেলে প্রথমে একে লঘু HCl সহযোগে দ্রবীভূত করে নিম্নবর্ণিত পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করুন।

 

গ্রুপ V মূলক NH4+ শনাক্তকরণ

গ্রুপ V মুলকগুলোকে অধ:ক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথক করার জন্য কোন গ্রুপ বিকারক নেই। তাই মজুদ দ্রবণের পরীক্ষার মাধ্যমে বা গ্রুপ IV অধ:ক্ষেপ পৃথকীকরণের পর পরিসুত দ্রবণের মাধ্যমে গ্রুপ V মূলক সনাক্ত করা হয়। আপনাদের পাঠ্যসূচীতে যেহেতুে পরীক্ষণীয় লবণে কেবল একটি ক্ষারীয় মূলক রয়েছে, তাই অন্য গ্রুপ অধঃক্ষেপ পাওয়া না গেলে লবণে অবশ্যই গ্রুপ V মুলক থাকবে । এ জন্য মজুদ দ্রবণ নিয়ে নিচের পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করুন।

ক্ষারকীয় মূলকের সিক্ত

আরও পড়ুন…

Leave a Comment