টয়লেট্রিজ ও পারফিউমারি: গোলাপ জল, হেয়ার অয়েল, টেলকম পাউডার প্রস্তুতির পদ্ধতি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “কর্মমুখী রসায়ন” ইউনিট ৭ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
টয়লেট্রিজ ও পারফিউমারি: গোলাপ জল, হেয়ার অয়েল, টেলকম পাউডার প্রস্তুতির পদ্ধতি
টয়লেট্রিজ ও পারফিউমারি (Toiletries and Perfumery)
মানুষ সুন্দরের পূজারি। সব মানুষই সুন্দর হতে এবং সুন্দর থাকতে চায়। এজন্য বিউটি পার্লারে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। দেহত্বকের রক্ষাকবচ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যুগ যুগ ধরে যেসব পদার্থ ব্যবহৃত হচ্ছে তাদেরকে বলা হয় প্রসাধনী। এগুলো শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহের সজীবতা রক্ষা করছে এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আকর্ষণীয় করে তুলছে। বর্তমানে প্রসাধনীর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিত্য নতুন প্রসাধনী আবিষ্কৃত হয়েছে। এর ফলে রসায়নবিদগণ নিরলসভাবে পরিশ্রম করে উদ্ভাবন করছেন যুগোপযোগী ব্যবহারযোগ্য এসব প্রসাধনী। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি, বডি স্প্রে, শ্যাম্পু, সুগন্ধি তেল, টুথপেস্ট, কোল্ড ক্রিম, স্লো, পাউডার, লিপিস্টিক, ডিউডরেন্ট, হেয়ার রিমুভার ওয়েল এবং ক্রিম, নেলপলিশ, জীবাণুনাশক পদার্থ, দুর্গন্ধনাশক পদার্থ প্রভৃতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রসাধন সামগ্রী ।
গোলাপজল (Rose water) :
গোলাপ তেল উৎপাদনের সময় উপজাত হিসেবে যে পদার্থ পাওয়া যায় তাকে গোলাপজল বলে। গোলাপ ফুলের পাপড়িকে পানির সাথে মিশ্রিত করে পাতন করলে পাতিত তরলের নির্যাসরূপে এ গোলাপজল পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী (Cosmetics) তৈরিতে সুগন্ধি হিসেবে, খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে এবং সুস্বাদু খাবার প্রস্তুতিতে গোলাপজল ব্যবহৃত হয়।
প্রস্তুত প্রণালি : গোলাপ ফুলের বাগান থেকে সূর্য উঠার 2-3 ঘন্টা পর শিশির মুক্ত কিছু সতেজ পাপড়ি সংগ্রহ করা হয়। একটি বড় পরিষ্কার গোলাকার পাত্রের নিম্নদেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি সিরামিক ইট রাখা হয়। ইটের উপর তাপ প্রতিরোধক পদার্থে (যেমন : মেলামাইন) তৈরি একটি গোলাকার বাটি রাখা হয়। বাটির নিম্নদেশে সিরামিক ইটের দুপাশে পানি ঢেলে তার উপর গোলাপ ফুলের পাপড়িগুলো রাখা হয়। গোলাকার পাত্রের উপরিভাগে একটি অর্ধ চন্দ্রাকৃতি পাত্র এমনভাবে বসাতে হয় যেন সংযোগস্থল ফাঁকা না থাকে। কিছু বরফের টুকরা এই অর্ধ চন্দ্রাকৃতি পাত্রের মধ্যে রাখা হয়। এবার
নিচের পাত্রটিকে উত্তপ্ত করা হয় যাতে পানি ফুটতে আরম্ভ করে। পাপড়ির সুগন্ধিযুক্ত পানি বাষ্পাকারে উনীভূত হয়ে তরল আকারে মেলামাইনের বাটিতে জমা হতে থাকে। মেলামাইনের বাটি পূর্ণ হলে তাকে বের করে নিয়ে গোলাপজল সংগ্রহ করা হয়। প্লাস্টিকের বোতলে নিয়ে এর মুখে কর্ক লাগিয়ে এতে লেবেল লাগানো হয় এবং পরে বাজারজাত করা হয়।
হেয়ার অয়েল (Hair Oil)
মাথা ঠাণ্ডা রাখা, চুল পড়া বন্ধ করা এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য হেয়ার অয়েল ব্যবহার খুবই জরুরি। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হেয়ার অয়েল হচ্ছে নারিকেল তেল এবং সুগন্ধি কেশ তেল। নিম্নে নারিকেল তেলের উৎপাদন প্রণালি বর্ণনা করা হলো :
নারিকেল তেল উৎপাদন :
প্রয়োজনীয় উপকরণ : সতেজ এবং পরিপক্ব নারিকেল, ব্রাহ্মি পাউডার, অ্যালোভেরার পেস্ট এবং তুলসী পাতা ।
পদ্ধতি : নারিকেলের বাইরের খোসা অপসারণ করা হয়। পরিষ্কার করার পর দা এর পিঠ দিয়ে আঘাত করে ২টি অংশে বিভক্ত করে নেওয়া হয়। অতঃপর পানি থাকলে তা কোনো গ্লাসে ঢেলে নিয়ে ফালি দুটিকে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিয়ে নারিকেল কুরানি দিয়ে কোরানো হয়। গরম পানিতে রেখে কুচি নারিকেলগুলোকে নরম করে নিতে হয়। এরপর কুচিগুলোকে থেঁতলিয়ে বা পিষে নিয়ে পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে রেখে চাপ প্রয়োগ করলে সাদা দুধের ন্যায় এক ধরনের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। একে মিল্ক বলে। এটিকে কোনো পরিষ্কার পাত্রে বা বাটিতে সংরক্ষণ করা হয়।

অ্যালোভেরার পাতার উপরের আবরণ অপসারণ করে অভ্যন্তরের নরম অংশ সংগ্রহ করা হয়। তুলসী পাতা পেস্ট করে 1 চামচ নিয়ে তাতে 5 চামচ ব্রাহ্মি পাউডার এবং 2 চামচ অ্যালোভেরা একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে পিষে পেস্টে পরিণত করা হয়। রক্ষিত নারিকেলের দুধের মধ্যে পেস্টকে যোগ করা হয় এবং উত্তমরূপে নাড়িয়ে সমসত্ত্ব মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
প্রাপ্ত মিশ্রণকে একটি কড়াই এর মধ্যে নিয়ে অল্প তাপে উত্তপ্ত করা হয়। কড়াই এর নিচের দিকে লালচে বাদামি অবশেষ পাওয়া যায় এবং উপরের দিকে ভাসমান তৈলাক্ত পদার্থ পাওয়া যায়। এটাই তেল। প্রস্তুতকৃত তেল উপর থেকে ঢেলে নিয়ে ঠাণ্ডা করে ফিল্টার করা হয়। সবশেষে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি পাত্র বা প্লাস্টিকের কৌটায় ঐ তেলকে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
টেলকম পাউডার প্রস্তুতি (Preparation of Talcum Powder)
আর্দ্রতা ও ঘাম রোধের জন্য গোসলের পরে টেলকম পাউডার ব্যবহার করা হয়। এটি পিচ্ছিলকারক ও দেহের দুই অঙ্গের ঘর্ষণজনিত প্রদাহ দূর করে । উন্নতমানের টেলকম পাউডার পিচ্ছিল এবং উজ্জ্বল সাদা বর্ণের। টেলকম পাউডারের মূল উপাদান ট্যালক। এছাড়া অতিরিক্ত পিচ্ছিলতার জন্য জিংক স্টিয়ারেট বা ম্যাগনেসিয়াম স্টিয়ারেট {(C17H35COO)2Mg} ব্যবহার করা হয়। জিংক স্টিয়ারেট {(C17H35COO)2Zn} কোমল এন্টিসেপটিক। এন্টিসেপটিক হিসেবে বোরিক এসিডও ব্যবহার করা হয়। পাউডারকে ফোলানোর জন্য CaCO3 বা MgCO3 ব্যবহার করা হয়। এগুলো পাউডারের সুগন্ধি ধরে রাখে।
আরও পড়ুন…