প্রশমন তাপ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এইচএসসি রসায়ন ১ম পত্র” এর “রাসায়নিক পরিবর্তন” ইউনিট ৫ এর অন্তর্ভুক্ত।
Table of Contents
প্রশমন তাপ
প্রশমন তাপ: 25°C তাপমাত্রায় এসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়ায় এক মোল পানি উৎপন্ন হওয়ার সময় যে পরিমাণ তাপের উদ্ভব ঘটে, তাকে প্রশমন তাপ বলা হয়। সব প্রশমন প্রক্রিয়াই তাপোৎপাদী বিক্রিয়া। কারণ প্রশমনের ক্ষেত্রে জলীয় দ্রবণে এসিডের হাইড্রোজেন আয়ন (H’) তথা হাইড্রোনিয়াম আয়ন (H3O) ও ক্ষারের হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH) যুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ যৌগ পানি উৎপন্ন করে।
মৃদু এসিড ও তীব্র এসিড :
যে সব এসিড জলীয় দ্রবণে আংশিকভাবে বিয়োজিত হয় তাকে মৃদু এসিড বলা হয়। বিভিন্ন জৈব এসিড যেমন মিথানোয়িক এসিড (H—COOH), ইথানোয়িক এসিড (CH3 – COOH), প্রোপানোয়িক এসিড(CH3 – CH 2 – COOH),, কার্বোনিক এসিড (H2CO3), নাইট্রাস এসিড (HNO2), হাইড্রোসায়ানিক এসিড (HCN) প্রভৃতি মৃদু এসিডের উদাহরণ। এসব এসিডের বিয়োজনের ক্ষেত্রে উভমুখী চিহ্ন দ্বারা বিয়োজনকে প্রকাশ করা হয় ।
CH3-COOH(aq)CH3-COO¯(aq) + H*
তীব্র এসিড জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণভাবে আয়নিত হয়। এদের বিয়োজনকে তীর চিহ্ন (→) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন— HCl, HNO3, H2SO4 ইত্যাদি তীব্র এসিড।
HCl(aq) – H*(aq) + Cl(aq) –
প্রকৃতপক্ষে কোনো এসিডের বিয়োজন ধ্রুবক, Ka এর মান যত কম এসিডটি ততো কম শক্তিশালী বা মৃদু এসিড হয়। বিয়োজন ধ্রুবক, Ka এর মান যত বেশি হয় এসিডটি ততো বেশি শক্তিশালী বা তীব্র এসিড হয়।
বিয়োজন ধ্রুবক :
মনে করুন AB একটি মৃদু তড়িৎবিশ্লেষ্য । দ্রবণে AB এর বিয়োজন সাম্য নিম্নরূপ :
AB ←→ A+ + B
এ উভমুখী বিয়োজনে ভরক্রিয়া সূত্র প্রযোজ্য হয় । সুতরাং ভরক্রিয়া সূত্রানুসারে AB তড়িৎবিশ্লেষ্যের বিয়োজন পক্রিয়ার সাম্য ধ্রুবক
পরিবর্তন ঘটে। ফলে তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে বিয়োজন ধ্রুবক K এর মানেরও পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট তড়িৎবিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে K এর মান নির্দিষ্ট থাকে।
মৃদু ক্ষার ও তীব্র ক্ষার :
যেসব ক্ষার জলীয় দ্রবণে আংশিকভাবে বিয়োজিত হয় তাকে মৃদু ক্ষার বলা হয়। যেমন— NH, OH, Al(OH)3, Fe (OH)3, Zn(OH)2 ইত্যাদি মৃদু ক্ষারের উদাহরণ । এসব ক্ষারের বিয়োজনের ক্ষেত্রে উভমুখী চিহ্ন দ্বারা বিয়োজনকে প্রকাশ করা হয়।
NH,OH(aq) ←→ NH (aq) + OH (aq)
তীব্র ক্ষার জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণভাবে আয়নিত হয়। এদের বিয়োজনকে তীব্র চিহ্ন (→) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন— NaOH, KOH, Ba(OH)2 ইত্যাদি তীব্র ক্ষারের উদাহরণ।
NaOH (aq) Na (aq) + OH (aq)
প্রকৃতপক্ষে কোনো ক্ষারের বিয়োজন ধ্রুবক, K, এর মান যত কম ক্ষারটি ততো কম শক্তিশালী বা মৃদু ক্ষার হয়। বিয়োজন ধ্রুবক Ko এর মান যত বেশি হয় ক্ষারটি ততো বেশি শক্তিশালী বা তীব্র ক্ষার হয়।
এসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়ার প্রশমন তাপের মান :
এক গ্রাম তুল্য ভর পরিমাণ এসিডের লঘু দ্রবণকে এক তুল্য ভর পরিমাণ ক্ষারের লঘু দ্রবণ দ্বারা প্রশমিত করতে বিক্রিয়া সিস্টেমের যে তাপের পরিবর্তন ঘটে তাকে প্রশমন তাপ বলে ।
তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের বিক্রিয়ার প্রশমনের ক্ষেত্রে প্রশমন তাপের মান সবসময় ধ্রুবক হয় এবং এর মান 57.34 kJ বা – –13.7 kCal। কারণ তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষার উভয়েই জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণভাবে আয়নিত হয়। ফলে এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ তীব্র এসিড ক্ষরীয় দ্রবণে এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ H’ আয়ন তথা H♭O’ আয়ন উৎপন্ন করে ।
একইভাবে এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ তীব্র ক্ষার জলীয় দ্রবণে এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ OH আয়ন উৎপন্ন করে। এ এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ H’ আয়ন ও এক গ্রাম তুল্য পরিমাণ OH আয়ন যুক্ত হয়ে এক মোল পানি উৎপন্ন হতে 57.34 kJ তাপ উৎপন্ন হয়।
আরও পড়ুন…