পরমাণু ও ইলেকট্রন বিন্যাস ২

পরমাণু ও ইলেকট্রন বিন্যাস ২: অরবিটাল ভিত্তিক ইলেকট্রন বিন্যাস একটি পরমাণুর ইলেকট্রন মেঘের ঠিক কোন কোন জায়গায় ইলেকট্রন পাওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা আছে, তা নির্দেশ করে। পরমাণু ও ইলেকট্রন বিন্যাস 1 আর্টিকেলে আমরা অরবিটাল ভিত্তিক একটি ইলেকট্রন বিন্যাস (Fe-26) দেখেছিলাম।

পরমাণু ও ইলেকট্রন বিন্যাস ২

[[ পরমাণু ও ইলেকট্রন বিন্যাস ২]]

ইলেকট্রন বিন্যাসে এভাবে এলোমেলো s, p, d কেন হলো? সেটি বর্ণনা করতে হলে আমাদের “আফবাউ নীতি” বুঝতে হবে। তার আগে s, p, d, f বা অরবিটাল অনুযায়ী ইলেকট্রন কক্ষপথের মানগুলো জেনে নেওয়া যাক।



দেখা যাচ্ছে, অরবিটগুলোর অরবিটাল সংখ্যা যত, তার দ্বিগুণ ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এবং কোন অরবিট বা কক্ষপথের কোন কোন অরবিটাল রয়েছে, তাও এখানে দেখা যাচ্ছে।
এখন আফবাউ নীতিতে ফিরে আসা যাক।

 

 

উপরের চিত্রটি আফবাউ নীতিকে ব্যাখ্যা করে। আফবাউ একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ নির্মাণ করা (building up)।
আফবাউ নীতির মূল কথা হলো, ইলেকট্রন প্রথমে কম শক্তিসম্পন্ন অরবিটালে প্রবেশ করবে। এরপর পরবর্তী শক্তিসম্পন্ন অরবিটালে ইলেকট্রন যাবে। এভাবে ক্রমান্বয়ে ইলেকট্রনসমূহ অরবিটালগুলোতে পূর্ণ হতে থাকবে।

এখন এই চিত্রে কক্ষপথ (n) এর মানের পাশে তার জন্য প্রযোজ্য অরবিটালগুলো পাশাপাশি লেখা হয়েছে। একটি তীর চিহ্ন ঘুরিয়ে পেচিয়ে অরবিটালগুলোকে ছেদ করে অতিক্রম করেছে। এই ছেদ করার যে ক্রম বা সিরিজ, ঠিক এই সিরিজেই অরবিটালগুলোতে ইলেকট্রন প্রবেশ করবে।

ইলেকট্রন বিন্যাসে আফবাউ নীতির এই আঁকাবাঁকা তীর যুক্ত ছবিটি মূলত অরবিটালগুলোর শক্তির ধারাবাহিক ক্রম ছোট থেকে বড় আকারে নির্দেশ করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে এটি নির্ণয় করা হয়?

অরবিটালগুলোর মান S = 0, p = 1, d = 2, f = 3 ধরে এই শক্তিস্তরের শক্তির ক্রম নির্ণয় করা হয়। এই মানগুলো কীভাবে এসেছে তা পরবর্তী আর্টিকেল “ইলেকট্রন বিন্যাস ও কোয়ান্টাম সংখ্যা” তে বর্ণনা করা হবে।
এখন মান নির্ণয়ে ফিরে যাই। 1s এর শক্তির মান হবে 1; কীভাবে?

শক্তিস্তর (n) + উপ-শক্তিস্তর (l) এর মোট যোগফলের মানকেই শক্তির ক্রম ধরা হয়।

তাহলে 3d এর মান কত হবে? n=3 ও d এর মান 2, এই দুইটি মানকে যোগ করলে হবে 3+2 = 5
তাহলে 3d এর শক্তির মান 5. এখন 4s এর শক্তির মান নির্ণয় করলে দেখা যাবে 4+0 = 4 , এখানে s এর মান 0 হওয়ায় 4s এর শক্তির মান 3d এর চেয়ে কম হয়েছে। তাহলে ইলেকট্রন আগে 4s এ প্রবেশ করবে এবং এরপর 3d তে প্রবেশ করবে।

তাহলে 5d এবং 6p এর মান নির্ণয় করা যাক। এখানে একটি মজার ব্যাপার আছে।
d= 2 ও p= 1 , অতএব 5d এর মান 5+2= 7 , 6p এর মান 6+1= 7

দুইটি মানই 7 , এখন ইলেকট্রন কোথায় আগে প্রবেশ করবে? মান একই হলে নিম্নশক্তিস্তরের সাব অরবিটালে আগে ইলেকট্রন প্রবেশ করবে, অর্থাৎ n এর মান যেখানে কম, সেখানে ইলেকট্রন আগে প্রবেশ করবে। তাই, 5d তে ইলেকট্রন প্রবেশের পরে 6p তে ইলেকট্রন প্রবেশ করবে।

ইলেকট্রন প্রবেশের সিরিজিটি এখন বোঝা যাচ্ছে। এই নীতিকে n+l এর নিয়ম বলে। এই নিয়মে উপ-শক্তিস্তরের ক্রম হবেঃ 1s, 2s, 2p, 3s, 3p, 4s, 3d, 4p, 5s, 4d, 5p, 6s, 4f, 5d, 6p, 7s, 5f, 6d, 7p…

এখন এই ক্রমে s এ দুইটি, p তে 6 টি, d তে 10 ও f এ 14 টি করে ইলেকট্রন প্রবেশ করতে থাকবে, যতক্ষণ না পরমাণুটিতে ইলেকট্রন রয়েছে।

এখন শুরুর ইলেক্ট্রন বিন্যাসটি সহজেই বুঝা যাবে। Fe এর ইলেকট্রন সংখ্যা 26.
26 টি ইলেকট্রন আফবাউ নিয়ম মেনে অরবিটালগুলোতে প্রবেশ করতে থাকবে।

26Fe => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s2 3d6

এখন আমরা 4s এ প্রথমে ইলেকট্রন প্রবেশের কারণ বুঝতে পারছি। 3d তে 10 টি ইলেকট্রন ধারণ ক্ষমতা থাকলেও 6 টি ইলেকট্রন প্রবেশের পরেই ইলেকট্রন বিন্যাসটি সম্পূর্ণ হয়েছে, কারণ শুরু থেকে ইলেকট্রন সংখ্যা গণনা করে 26 পূর্ণ হয়ে গেছে।

অরবিট অনুযায়ী সাজিয়ে লিখলে Fe এর ইলেকট্রন বিন্যাসকে এভাবে লিখা যাবেঃ

26Fe => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d6 4s2

অর্থাৎ, মৌলটির নাম শুরুতে লিখতে হবে, এরপর এরো মার্ক করে নিচের চিত্রের নির্দেশ মত ইলেকট্রন ও অরবিটালগুলো লিখে যেতে হবে।


তাহলে এভাবে কয়েকটি মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস করে দেখা যাক?
সোডিয়াম, Na (11) => 1s2 2s2 2p6 3s1
ম্যাগনেসিয়াম, Mg (12) => 1s2 2s2 2p6 3s2
K (19) => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s1
Ca (20) => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s2
Br (35) => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s2 3d10 4p5
Kr (36) => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s2 3d10 4p6
Pu (94) => 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s2 3d10 4p6 5s2 4d10 5p6 6s2 4f14 5d10 6p6 7s2 5f6

এখন, Na এর সর্বশেষ শক্তিস্তর থেকে একটি ইলেকট্রন চলে গেলে সেটি Na+ আয়নে পরিণত হয়। তখন তার ইলেকট্রন বিন্যাস কী হবে?
তখন Na এর 10 টি ইলেকট্রন বিদ্যমান থাকবে। কাজেই,

Na: 1s22s22p63s1 এবং Na+: 1s22s22p6.

একইভাবে,

P: 1s22s22p63s23p3 কিন্তু, P3−: 1s22s22p63s23p6.

ইলেকট্রন বিন্যাস করতে গেলে মৌলগুলোর ইলেকট্রন সংখ্যা এবং পারমানবিক সংখ্যা জানতে হবে। এজন্য, পর্যায় সারনী জানা খুবই জরুরী। পর্যায় সারণি নিয়ে chemistryGOLN.com এর আর্টিকেলটি এব্যাপারে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment